প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে, দেশের কোরবানির পশুর একটি বড় অংশ সরবরাহ হয় সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। খাটালগুলো বন্ধ থাকায় সীমান্ত পথে আসছে না ভারতীয় গরু। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি পশুর হাটগুলোতে।
স্থানীয় খামারি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এবার হাটগুলোতে দেশি গরুর দাম পাচ্ছে খামারিরা। ভারত থেকে এবার গরু না আসায় ক্রেতারা কোরবানির জন্য দেশি গরুর দিকে ঝুঁকছেন। দাম ভালো পাওয়ায় আমরা খুশি। তবে শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে গত দু’বছরের মত আবারও লোকসানের আশঙ্কা আছে খামারিদের। কথা হয় মনাকষা হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আব্দুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার গরু পালন করে ন্যায্য মূল্য পেয়েছি। ভারত থেকে গরু আসলে এ মূল্য পেতাম না।’
এদিকে, গরুর দাম বেশি হওয়ায় তা কিনতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরুর আমদানি কম হওয়ায় দেশি গরুর দাম বেশি হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। যে গরু গত বার ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় পাওয়া গেছে এবার তা ৮০ থেকে দেড় লাখ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কষ্টকর। জেলার সবচেয়ে বড় দুটি হাট তত্তিপুর ও মনাকষা হাটের অনেক ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটাই জানিয়েছেন।
নোয়াখালি থেকে গরু ক্রয় করতে আসা ব্যাপারী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের তত্তিপুর হাটে গরু কিনে আসছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার চাহিদা অনুযায়ী গরু কিনতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘গরু প্রতি ৮ হাজার টাকা রাস্তা খরচ আছে। এ অবস্থায় এতো চড়া দামে গরু কিনে আমাদের পোষাবে না। কারণ চড়া দামে গরু কিনে আমাদের চড়া দামেই বিক্রি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত যদি বিক্রি করতে না পারি, এই আশঙ্কায় আমরা চাহিদা অনুযায়ী গরু কিরতে পারছি না।’
আনন্দ কুমার অধিকারি বলেন, ‘এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় কোরবানির হাটগুলোতে ১১টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এ সকল টিম নির্ধারিত দিনে পশুর হাটগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন ও হাট ইজারাদারদের সঙ্গে রোগাক্রান্ত গরু শনাক্তকরণে কাজ করছে।’
প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন ‘কোরবানির জন্য আমাদের ভারতীয় কোনও গরুর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া কোরবানিতে দেশের মানুষের প্রথম পচ্ছন্দই থাকে দেশি গরুর। আর দাম বেশির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত দুই বছর খামারিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ বছর তারা দাম ভালো পাচ্ছেন। তবে এখনকার অর্থনৈতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গরুর বর্তমান দাম খুব একটা বেশি না।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে মানুষের আয় বেড়েছে। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি আগামীতে গরু প্রতিপালনের ধারাবাহিতকাও বজায় থাকবে।’