সেই বিয়ের মঞ্চেই ফিরলো সুমাইয়ার রক্তাক্ত মরদেহ

সুমাইয়া খাতুন

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়ায় বর রাজনের বাড়িতে যেমন শোকের ছায়া, তেমনি নববধূ সুমাইয়াকে হারিয়েও শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন উল্লাপাড়া উপজেলার চরঘাটিনা গুচ্ছগ্রামবাসী। কোনোভাবেই এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

সোমবার (১৫ জুলাই) মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়ায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় বর রাজনসহ নববধূ সুমাইয়া খাতুন ও তার চার নিকট স্বজন প্রাণ হারান। একই গাড়িতে রাজন ও সুমাইয়ার সঙ্গে ওই দিন মারা যান মোট ১১ জন।

বিকালে উপজেলার চরঘাটিনা গুচ্ছগ্রামে যে বাড়ির আঙিনায় বিয়ের মঞ্চে বর-কনে একসঙ্গে বসে একে অপরের সারা জীবনের সঙ্গী হয়েছিলেন, ঠিক সেই মঞ্চেই পরদিন মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে ফিরেছে কনে সুমাইয়ার রক্তাক্ত মরদেহ।

স্বজনরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে সুমাইয়া ও রাজনের বিয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সোমবার বিকাল ৪টার পর তাদের বিয়ে হয়। তিনদিন পর স্বামীকে নিয়ে ফেরার কথা থাকলেও মাত্র একরাত পর বাবার ভিটায় ফিরে আসে সুমাইয়ার রক্তাক্ত মরদেহ।

সুমাইয়াসহ স্বজনদের লাশ তাদের বাড়ি পৌঁছালে সেখানে শোকের মাতম দেখা যায়। সুমাইয়ার মা মেয়ের লাশের পাশে বসে বারবার একই কথা বলছিলেন, ‘হায় খোদা আমরা কী অপরাধ করেছিলাম, কেন এভাবে বাবা-মরা মেয়েটার কপালে পুড়লো। এখন আমার ব্যাইচা থাইক্যা কি লাভ।’ সুমাইয়ার মার বিলাপে আশপাশের কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। দুপুরের আগেই চরঘাটিনা কবরস্থানে জানাজা শেষে সুমাইয়া ও তার স্বজনদের মরদেহ দাফন করা হয়।

সলপ স্টেশন এলাকার ঘোল ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, চরঘাটিনা গুচ্ছগ্রামে যখন সুমাইয়া ও তার স্বজনদের লাশ আসে তা দেখে আমাদের সবার চোখে পানি এসে যায়। এ ধরনের হৃদয়বিদারক দৃশ্য আমার জীবনে কোনও দিন দেখিনি। স্বামীর সঙ্গে মেয়েটির সংসার করা হলো না।

আরও পড়ুন:

‘উৎসবের বাড়িতে’ এখন শোকের মাতম