ঠেকনা দিয়ে চালানো হচ্ছে উল্লাপাড়ার রেল সেতুটি

ঠেকনা দিয়ে চলছে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের উল্লাপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত রেল সেতুটি

সিরাজগঞ্জের ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের উল্লাপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত রেল সেতুটি ঠেকনা দিয়ে চালাচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের লোকজন। সম্প্রতি সেতু দুটির গার্ডারে ফাটল দেখা দেওয়ায় কাঠের স্লিপার ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। বন্যার পানি কমলে সেতু দুটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক।

এ সেতুটি ব্যবহার করে ঢাকা, খুলনা, ঈশ্বরদী ও রাজশাহীগামী আন্তঃনগর, লোকাল ও মালবাহী ট্রেনসহ কমপক্ষে ২০টি যাতায়াত করে। সেতু দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এগুলো পার হওয়ার সময় ট্রেনের গতি একদম কমিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান চালকরা। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে সেতু দুটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন চালক ও যাত্রীরা। 

জেলার উল্লাপাড়ার লাহিড়ীমহোনপুরের বঙ্কিরহাট এলাকার ২৮নং ও কয়ড়া ইউনিয়নের মহিষাখোলা কামারপাড়া এলাকার ২৯নং রেলব্রিজ দুটির গার্ডারে সম্প্রতি ফাটল ও লোহার পাতে মরিচা ধরে ক্ষয়ে গেছে। যে কারণে সেতু দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রতিদিন থেমে থেমে ও ধীরগতিতে চলছে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২০টি ট্রেন।

সরেজমিন দেখা যায়, সেতু দুটির গার্ডারে বেশ কিছু স্থানে ফাটল। ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দুটির নিচে লোহার অ্যাঙ্গেল ও কাঠের স্লিপারের ঠেকনা দেওয়া। সেতুর দু’পাশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার লেখাসহ সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। রেল বিভাগের দু’জন ওয়েম্যান সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্রেন দেখলেই ওয়েম্যানরা লাল-সবুজ পতাকা দেখিয়ে চালককে সতর্ক করেন। সংকেত পেয়ে চালকরা দ্রুত ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়। গত দু’মাস ধরে এভাবেই চলছে।

ওয়েম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ও জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেকজন পালাক্রমে ডিউটি করেন। ট্রেন আসতে দেখলেই তারা লাল ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার সংকেত দেন। চালকরা এ সংকেত পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেন। পরে গতি কমিয়ে ৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে সেতু দু’টি পারাপার হন। কখনো কোনও চালক অসতর্ক হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ঈশ্বরদী রেল রুটের সিরাজগঞ্জ থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত যতগুলো ব্রিজ আছে এর অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ব্রিজ দুটির বয়স প্রায় ১০০ বছর হয়েছে। এছাড়া উল্লাপাড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার রেলপথের অংশটি চলন বিলের মধ্যে হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানির তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের ধাক্কায় সেতু দু’টি গার্ডার দুর্বল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ রেলপথে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ প্রায় ১৪টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও ৬টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। সব ট্রেনই এখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ দুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের বন্যার পানির তীব্র স্রোত ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে ব্রিজ দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা শেষ হলেও এখনো সেখানে অনেক পানি রয়েছে। তাই মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রেলপথটি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ। তাই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আপাতত ব্রিজের নিচে অস্থায়ীভাবে স্লিপার ও অ্যাঙ্গেল দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ওই ব্রিজের পাশে বিকল্প ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ দুটি নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত স্পিডেই ট্রেন চালাতে চালকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।