বগুড়ায় ভ্রাম্যমাণ দোকানে এলপিজি সিলিন্ডার: অগ্নিঝুঁকিতে নগরবাসী

রাস্তায় সিলিন্ডর গ্যাস ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবার

সন্ধ্যার আগেই বগুড়া শহরের জিরোপয়েন্ট সাতমাথায় হরেক রকম খাবারের দোকান বসে। অন্তত ২৫টি দোকানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পেঁয়াজু, চানাচুর, পাঁপড়, বেগুনি, ঝুরি, চটপটি, লটপটি ও ফুচকা ছাড়াও ভাপা পিঠাসহ অন্যান্য খাবার তৈরি ও বিক্রি করছে। তবে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে এসব দোকানে চুলা জ্বালাতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হয়ে থাকে। যে কোনও সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সচেতন জনগণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি এবং রান্নায় প্রকাশ্যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা ও আশপাশের বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকানে মুখরোচক খাবার পেঁয়াজু, চানাচুর, পাঁপড়, বেগুনি, ঝুরি, চটপটি, লটপটি, ফুচকা, ভাপা পিঠা, ডিমের চপ, চিংড়ির বড়াসহ অন্যান্য মুখরোচক খাবার তৈরি ও বিক্রি হয়ে আসছে। সেখানে কয়েকটি কাবাবের দোকানও বসে। এসব দোকানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি কোনও খেয়াল রাখা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরনো তেল, মাংসের চর্বি ও নিম্নমানের তেল দিয়ে এসব খাবার ভাজা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কাবাবগুলো নিম্নমানের মাংস এবং অনেক সময় পঁচা গোশত দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। কোনও কোনও স্থানে গরু-ছাগলের ভুড়ির কাবাবও বিক্রি হয়। অনেকেই পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে এ খাবার খান। আবার কেউ কেউ কিনে বাড়িতে নিয়ে যান।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্স (ইতিহাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম, শহরের মালতিনগরের গৃহবধূ সানজিদা পারভিন, বাদুড়তলার ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান, কাটনারপাড়ার গৃহবধূ নূপুর সরকার জানান, তারা ও তাদের মতো অনেকে বিকালে বা সন্ধ্যার পর সাত মাথায় বিভিন্ন ধরনের ভাজাসহ কাবাব, চাপ, চটপটি ও পিঠা খেতে আসেন।

যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস

হুমায়ুব কবির নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘এসব দোকানে চুলার পাশে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার রেখে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। এতে যে কোনও সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিন আগে পাশের সেলিম বিরিয়ানি অ্যান্ড সুইটসের গ্যাসের চুলায় থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় দোকানের কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। পরে আশপাশের ব্যবসায়ীরা এসে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ দোকানি অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু সাতমাথা নয়, নবাববাড়ি সড়ক, সার্কিট হাউসের সামনে, শহীদ খোকন পার্কের সামনে, পৌর পার্কের সামনে, বড়গোলা থেকে সাতমাথা ও কাঁঠালতলা থেকে ফতেহ আলী বাজারের সামনে পর্যন্ত অসংখ্য দোকান বসে। মধ্যরাত পর্যন্ত এসব দোকানে কেনাবেচা হয়। প্রভাবশালীরা এসব দোকান থেকে ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলে থাকে। এসব টাকা কার নির্দেশে তোলা হয় তা দোকানিরা বলতে পারেন না।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তারা অগ্নিপ্রতিরোধক আইনে প্রকাশ্যে বা জনবহুল এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার নিষেধ করতে পারেন।

পদ্মা ওয়েল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার মারুফ রহমান জানান, এলপিজির যথেচ্ছ ব্যবহারের ব্যাপারে কোনও নীতিমালা আছে কি না তা তার জানা নেই। তবে চুলার কাছাকাছি সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থেকেই যায়।

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিলিন্ডারের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে সাতমাথা থেকে এসব দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর আবারও দোকানগুলো বসেছে। আবারও দোকানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।