কিস্তির জন্য বাড়িতে বসে আছেন এনজিও কর্মী, আত্মহত্যা ব্যবসায়ীর

বগুড়ার আদমদীঘিতে পাওনাদার ও ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করার চাপে এনামুল হক প্রামাণিক (৫৫) নামে এক ধান-চাল ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার (০১ জুন) ভোরে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এনামুল উপজেলার পুশিন্দা গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। এ ঘটনায় দুপুরে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এর আগে সোমবার ধার্য তারিখে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ভয়ে দিনভর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে ছিলেন এনামুল।

করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় অব্যাহত থাকা ও এনজিও কর্মীদের চাপে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্বজনদের বরাত দিয়ে আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ওই ব্যবসায়ী বিভিন্ন এনজিও এবং মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন। পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ না থাকায় এবং পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, এনামুল হক ব্যবসার জন্য স্ত্রী সালেমা বেগমের নামে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, আশা, দাবী মৌলিক উন্নয়ন সংস্থা, টিএমএসএস, গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা ঋণ নেন।

এছাড়া তিনি বিভিন্নজনের কাছ থেকে আরও টাকা ধার নিয়েছেন। করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তার বাড়িতে এসে চাপ সৃষ্টি ও অসম্মানজনক কথা বলতে থাকেন পাওনাদাররা।

জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কর্মী হাফিজুল ইসলাম সোমবার কিস্তির জন্য দুবার এনামুলের বাড়িতে যান। কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে স্ত্রী সালেমা বেগম তার ভাইয়ের বাড়িতে যান এবং এনামুল আত্মগোপন করেন। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খান এনামুল। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ভোরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

এনামুল হকের ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, তার বাবা এনজিওর কিস্তি আদায়কারীদের চাপে আত্মহত্যা করেছেন।

প্রতিবেশী আবদুস সোবহান ও ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী জানান, কিস্তি আদায়কারীরা বাড়িতে এসে বসে থাকেন ও দুর্ব্যবহার করেন। এ কারণে ওই ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার লুৎফর রহমান এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী হাফিজুল ইসলাম বলেন, সোমবার কিস্তি পরিশোধের কথা ছিল। সকাল-বিকাল বাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম। এনামুল হক ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মকবুল হোসেন বলেন, চাপ দিয়ে কিস্তি আদায়ের নির্দেশনা নেই। তবে কোনো সদস্য দিতে চাইলে আমরা নিচ্ছি।

এদিকে ভুক্তভোগীরা করোনাকালে এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় বন্ধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।