আর ভাতা নিতে চান না লাজিনা বেওয়া

বগুড়ার অনেক মানুষ যখন উৎকোচ দিয়েও সরকারের বিভিন্ন ভাতা কার্ড পাচ্ছেন না, তখন আদমদীঘি উপজেলার বিধবা লাজিনা বেওয়া তার বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দিতে চান। সংসারে স্বচ্ছলতা আসায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, লাজিনা বেওয়া বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতইল গ্রামে মৃত হাদিস আলীর স্ত্রী। মাত্র ১০ শতক সম্পত্তি রেখে তার স্বামী ১৯৮২ সালে মারা যান। মাত্র ২২ বছর বয়সে বিধবা লাজিনা বেওয়া ছোট দুটি মেয়ে ও ছয়মাস বয়সের ছেলে মামুনকে ঘিরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৯৮ সালে বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন। তবে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরলে ভাতার কার্ড ফেরত দেবেন। অনেক কষ্টের মধ্যে দুটি মেয়েকে বিয়ে দেন। একমাত্র ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন লেখাপড়া শেষ করেছেন। সংসারের হাল ধরতে সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতিতে) ২০১৪ সালে মাত্র ৩৩ হাজার টাকা খরচে মালয়েশিয়া যান মামুন।

দুই বছর পর দেশে ফিরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকপদে যোগদান করেন। ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কারণে লাজিনা বেওয়ার সংসারে অভাব দূর হয়েছে। তাই তিনি এবার বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দিতে চাইছেন। কষ্টের দিনে এমন সহযোগিতা পাওয়ায় তিনি সরকারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘সবাই যখন পেতে ব্যস্ত, তখন তিনি (লাজিনা) ফেরত দিতে চান। এটা সত্যি আশ্চর্যজনক ঘটনা। আমাদের ইউনিয়নে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন জানান, ‘দেশে এমন মানুষ বিরল। এ উপজেলায় কার্ড ফেরত দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বিধবা ওই নারীর সিদ্ধান্ত খুব ভালো লেগেছে। হিসাব বন্ধের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদন পেলে হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

লাজিনা বেওয়া থেকে সমাজের অন্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন।