বগুড়ায় ছাগলকাণ্ড: সেই ইউএনওকে বদলি

অবশেষে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিনকে বদলি করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের বাগানের ফুলগাছ খাওয়ার অপরাধে তিনি একটি ছাগলকে পাঁচদিন আটকে রেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছাগলের মালিককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন।

স্থানীয় সরকার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) উপপরিচালক পদে তাকে বদলি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (০৮ জুন) তার বদলি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

বুধবার (০৯ জুন) বিকালে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু বলেন, ইউএনওর বদলির কথা শুনেছি। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।

এ বিষয়ে জানতে ইউএনও সীমা শারমিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও ধরেননি। এজন্য তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউএনও সীমা শারমিন উপজেলা পরিষদ চত্বরের পার্কে ফুলের বাগান করেন। উপজেলা পরিষদের পাশে বসবাসকারী জিল্লুর রহমানের স্ত্রী সাহেরা খাতুন সংসারের অভাব দূর করতে হাঁস-মুরগি, ছাগল লালন-পালন করেন। তার একটি ছাগল গত ১৭ মে ওই বাগানে ঢুকে ফুলগাছের পাতা খায়।

ইউএনও সীমা শারমিনের নির্দেশে নিরাপত্তাপ্রহরীরা ছাগলটিকে আটক করেন। সাহেরা বেগম খোঁজ পেয়ে পরিষদে গেলে ছাগল ফেরত না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ইউএনওর কাছে পাঁচদিন ধরনা দিয়েও ছাগল পাননি। তাকে বলা হয়, ছাগল ফুলগাছ খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। টাকা জামা দিয়ে ছাগল নিতে হবে।

সাহেরা খাতুন জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউএনও গত ২২ মে পাঁচ হাজার টাকায় ছাগল বিক্রি করে দেন। ইউএনওর বাংলোর কর্মচারীরা সাহেরা বেগমকে বিষয়টি জানিয়ে, জরিমানার দুই হাজার টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট তিন হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলেন।

এরপর থেকে সাহেরা খাতুন বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও ছাগল ফেরত পাননি। এ নিয়ে ২৬ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে ইউএনও পরদিন নিজে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মালিকের কাছে ছাগলটি ফিরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সীমা শারমিন সেদিন বলেছিলেন, আমি ছাগল বিক্রি করিনি।ছাগল ফুলবাগান নষ্ট করায় মালিককে তিন দফা সতর্ক করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি কর্ণপাত না করায় ছাগল আটক করে একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছিলো। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মালিককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বলেন, ইউএনওকে বদলির খবর পেয়েছি। তবে কেন তাকে বদলি করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জিয়াউল হক সাংবাদিকদের জানান, এটি তার নিয়মিত বদলি। অন্য কারণে তাকে বদলি করা হয়নি।