রাজশাহী মেডিক্যালে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ মৃত্যু

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত এটাই হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও আট জন নারী। মারা যাওয়াদের মধ্যে আট জনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার (২৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল ৮টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজশাহীর ১৩ জন, চাঁপাইনবাগঞ্জের একজন, নওগাঁর চার জন মারা যান। এদের মধ্যে চার জন মারা যান আইসিইউতে। মৃতদের মধ্যে ছয় জনের বয়স ৬১ বছরের উপরে। বাকিদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিন জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের চার জন রয়েছেন।

এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২৪ দিনে (১ জুন থেকে ২৪ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ১২১ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৩ জন। এর আগে, হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৪ জুন ও ২৩ জুন ১৬ জন এবং সবচেয়ে কম ১২ জুন চার জন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১০, নাটোরের চার, নওগাঁর ছয় ও পাবনার একজন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৩ জন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪০৪ জন। বাকিদের মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত বেড তৈরি করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৭২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ জন, নাটোরের ২৬ জন, নওগাঁর ৩২ জন, পাবনার ১০ জন, কুষ্টিয়ার তিন জন, চুয়াডাঙ্গার একজন ও ঢাকার একজন রয়েছেন। আইউসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮ জন।

এদিকে টানা চারদিন কম থাকার পর রাজশাহীতে ফের বেড়েছে করোনা শনাক্তের হার। বুধবার রাতে প্রকাশিত রামেকের দুটি ল্যাবের রিপোর্টে রাজশাহীর ৩৮০ নমুনা পরীক্ষা করে ১২৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যা আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে সোমবার ছিল ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, বুধবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পৃথক ল্যাবে ৬৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে ১৮৮ জনের।

রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯১ নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। আর নওগাঁর ১৮৩ নমুনার মধ্যে পজিটিভ এসেছে ৫০ জনের। এছাড়াও বিদেশগামী তিন জনের নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফল এসেছে।

উল্লেখ্য, গত ঈদের পর থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ জুন থেকে রাজশাহী শহরে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরও সাতদিন বাড়ানো হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাত ১২টায়। কিন্তু সংক্রমণ ও মৃত্যু না কমায় লকডাউন আরও সাতদিন বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সংবাদ সম্মেলন করে লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা দেন।