কোরবানির পশু নিয়ে ঢাকায় আসছে ট্রেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ থেকে কোরবানির পশু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন। শনিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ে। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৮০টি গরু ও চারটি ছাগল নিয়ে রওনা হয় ট্রেনটি।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন পৌঁছে সেখান থেকে ২০টি গরু ও সাতটি ছাগল তোলা হয় ট্রেনটির ওয়াগনে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে বড়াল ব্রিজ থেকে ওঠানো হয়েছে ১০০টি ছাগল।

কোরবানির পশু পরিবহনে প্রতিটি ওয়াগেনের স্টেশন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার তেজগাঁও প্রতি ওয়াগনের ভাড়া ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। কাঁকনহাট ও রাজশাহী স্টেশন থেকেও তেজগাঁও পর্যন্ত একই ভাড়া। এছাড়া চাটমোহর থেকে তেজগাঁও ৯ হাজার ২৩০ টাকা ও উল্লাপাড়া থেকে আট হাজার ৫৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ট্রাকের তুলনায় ওয়াগনে ভাড়া কম লেগেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাকে কোরবানির পশু পরিবহনে ঝুঁকি থাকে। সড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে পশু অসুস্থ হয়ে যায়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। সেই দিক থেকে এই ধরনের ঝুঁকি নেই ট্রেনে।

রাজশাহী স্টেশন থেকে চারটি কোরবানির গরু ঢাকায় স্বজনদের জন্য পাঠান এমদাদুল হক বাবু। তিনি জানান, তেজগাঁও স্টেশনে নামবে গরুগুলো। প্রতিটি গরুর ভাড়া হিসেবে তাকে দিতে হয়েছে ৫৯৬ টাকা। ট্রাকের তুলনায় সামান্য ভাড়া। তবে ট্রেনে গরু অসুস্থ ও সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই বললেই চলে।

Rajshahi Cattle Train Leave News 17.07 (4)

অন্যদিকে, প্রথম যাত্রায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে চারটি ওয়াগনে গরু ওঠানো হয়। এ সময় রেল স্টেশনে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন শিমুল, জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। প্রতিটি ওয়াগনে ২০টি করে মোট ৮০টি গরু ও চারটি ছাগল নিয়ে স্পেশাল ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।

শ্রীরামপুরের গরুর খামারি শামিম মুন্সি জানান, ট্রেনে দুইটি ওয়াগনে ৪০টি গরু নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৫৯১ টাকা। এতে করে টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এ মুহূর্তে মহাসড়কে যে পরিমাণ যানজট তাতে ট্রাকে বহন করে যথাসময়ে ঢাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সহজ বাহন হিসেবে ট্রেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় খামারিরা লাভবান হয়েছে।

টিকরামপুরের আরেক ব্যবসায়ী সামসুল ইসলাম জানান, তাদের দুজনের ২০টি গরু ঢাকা নেওয়া হচ্ছে। ট্রাকে পাঠালে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হতো, ট্রেনে সেই ঝামেলা নেই। তারপর খরচও কম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল্লাহ জানান, ক্যাটেল ট্রেনে গরু পাঠানোর জন্য আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন খামারি ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিলো। তারা এতে সাড়া দেওয়ায় চারজন খামারি ও ব্যবসায়ীর ৮০টি গরু ও চারটি ছাগল এ ট্রেনে ঢাকায় গেছে। প্রতিটি গরু বহনে ৫৯১ টাকা এবং ছাগল বহনে ২৪৬ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ৮০টি গরুতে টার্মিনাল চার্জ ও অতিরিক্ত চার্জসহ সবমিলিয়ে ৪০ হাজার ২৪৬ টাকা আয় হয়েছে।

পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, করোনাকালে প্রান্তিক খামারিদের জন্য স্বল্প খরচে ঢাকায় কোরবানির পশু পরিবহন সরকারের একটি ভালো উদ্যোগে। এই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিলো। আগামীতে আরও বড় পরিসরে কোরবানির পশু পরিবহনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। ব্যবসায়ীরা ফ্যান ও গরুর পায়ের নিচে বালু দেওয়ার দাবি জানান। সেগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে।