পাবনায় হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করলো বহিরাগতরা, আটক ১

পাবনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বহিরাগতরা এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাতের এ ঘটনায় হাসপাতালে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দোষীদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। 

রাতে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের হস্তক্ষেপে চিকিৎসকরা কাজে ফেরেন। লাঞ্ছিতের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে আটকও করেছে পুলিশ।

পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ডা. এ আর রন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শালগাড়ীয়া এলাকায় মারামারির ঘটনায় আহত এক রোগী আসে। তার সঙ্গে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত আলী বিল্লুর ভাই মনু আলী ও কয়েকজন যুবক। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক আল আমিন সৌরভ রোগীর সঙ্গে নিয়ে আসা একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের পরামর্শ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করতে বলেন। 

কিন্তু ওই যুবকরা তাতে রাজি না হয়ে ডা. সৌরভকে গালাগাল করে মারতে উদ্যত হন। সৌরভ দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে গেলে হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ডা. হাসানুজ্জামান, সার্জারি বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ডা. সজীব হাসানের সামনেই আবারও তাকে মারধরের চেষ্টা চলে। 

এ সময় পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. মাহফুজ নয়ন বহিরাগত যুবকদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা অকথ্য গালাগাল করে ডা. সৌরভকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। 

ডা. রন জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা হতবিহবল হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে বিষয়টি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্সকে জানানো হয়। পরে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস মিললে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে ফেরেন। 

মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজ নয়ন বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পাবনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে তারা দিন রাত হাসপাতালে কাজ করছেন। এ সময় বহিরাগত যুবকেরা চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করবে, বিষয়টা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে আমাকে লাঞ্ছিতের ঘটনা জানিয়েছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে. ঘটনার পর রাতেই অভিযুক্ত যুবক মনু আলীকে আটক করেছে পুলিশ। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে মনু আলীকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকরা দিনরাত এক করে যোদ্ধার মত কাজ করছেন। চিকিৎসকদের লাঞ্ছিতের ঘটনাটি নিন্দনীয়। অপরাধীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। চিকিৎসকরা কাজে ফেরায় হাসপাতালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।