বগুড়া-জামালপুর নৌ পথে বৃহস্পতিবার থেকে ফেরি চলাচল শুরু

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) থেকে বগুড়া-জামালপুর নৌ পথে শুরু হচ্ছে ফেরি (সি ট্রাক) চলাচল। ইতোমধ্যে ঘাটে এসে পৌঁছেছে সি ট্রাক। চলাচলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পল্টুন স্থাপনসহ অন্যান্য কাজও সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদিন দু’বার বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা খেয়াঘাট ও জামালপুরের মাদারগঞ্জের জামথল খেয়াঘাট থেকে সি ট্রাক চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে জামথল ঘাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সি ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এ খবরে দুই জেলার যমুনা পাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভাড়া বেশি ধার্য হওয়ায় স্থানীয়রা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার চালু করে বাহাদুরাবাদ রেল ফেরি। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হলে রেল বিভাগ গাইবান্ধার বালাসী-জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ফেরি পারাপার বন্ধ করে দেয়। 

এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের পরিবর্তে মাদারগঞ্জ হয়ে নৌকায় যমুনা নদী পার হয়ে বগুড়া হয়ে যাতায়াত শুরু করেন। বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গের মানুষ সারিয়াকান্দির কালিতলা বা মথুরাপাড়া ঘাট থেকে খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওপারের জেলাগুলোতে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ করতে থাকেন। কালিতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। নৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

এ সংকট নিরসনে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল মান্নান বেশ কয়েক বছর আগে যমুনা নদীতে সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবিতে প্রচারণা চালান। এই রুট চালু হলে বঙ্গবন্ধু সেতু পথে যেতে হবে না। এতে বগুড়া-ঢাকা রুটে প্রায় ৮৫-৯০ কিলোমিটার পথ কমবে।

তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির প্রচেষ্টায় নৌ পথ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ ১৬ কিলোমিটার রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। 

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং সি ট্রাকের ইজারাদার জাহেদুর রহমান উজ্জ্বল তালুকদার জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌ পথে ফেরি সার্ভিস চালু হচ্ছে। এতে দু’পাড়ের মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের বিআইডব্লিউটিএ’র ডকইয়ার্ড ছেড়ে আসা ‘শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ নামে সি ট্রাক সোমবার বিকাল ৩টায় জামথল খেয়াঘাটে ভিড়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘাট পরিদর্শন করেছেন। দু’জেলার ঘাট প্রস্তুতের পর পল্টুন বসানো হয়েছে। আগামী ১২ আগস্ট বেলা ১০টার দিকে জামতল ঘাটে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি (সি-ট্রাক) চলাচলের উদ্বোধন করবেন। 

ফেরি চালু হলে বগুড়া-জামালপুর নৌ রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবেতিনি আরও জানান, উদ্বোধনের পর সি ট্রাক প্রতিদিন বেলা ১১টা ও বিকাল সাড়ে ৩টায় জামথল খেয়া ঘাট ছাড়বে। বেলা ২টা ও বিকাল ৫টায় সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে রওনা হবে। ১৬ কিলোমিটার নৌপথে ৪০ মিনিটের যাত্রায় ভাড়া ধার্য হয়েছে ১০০ টাকা। সি ট্রাকে ২০০ যাত্রীর বসার আসন ও দোতলায় ভিআইপি এসি কেবিন রয়েছে। এতে ৩-৪টি হালকা যান ও ১৫-২০টি মোটরসাইকেল পারাপার করা যাবে বলে জানান তিনি।

ইজারাদার উজ্জ্বল তালুকদার আরও জানান, বর্তমানে বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সি ট্রাক মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে ভিড়বে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বালিজুড়ি বাজারে ঢাকাসহ অন্যান্য রুটের বাস আছে। যাত্রীদের আপাতত এ তিন কিলোমিটার পথ বিভিন্ন যানবাহনে যেতে হবে। পরবর্তীতে জামথল ঘাটের কাছে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জে জামথল রুটে ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ স্বল্প সময় ও খরচে যমুনা নদীর ওপারে যেতে পারবেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতুতে জট কমবে। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের এমপি মির্জা আজম সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত দুই পাড়ে কোনও ফেরিঘাট নির্মাণ হচ্ছে না। যাত্রী ও ছোট গাড়ি পারাপারের মধ্য দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু হলেও শিগগিরই বড় ফেরিতে বড় যানবাহন পারাপারও শুরু হবে। এজন্য বগুড়া-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে জামথল পর্যন্ত এলজিইডির ১২ ফুট চওড়া সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিগগিরই শুরু হবে জমি অধিগ্রহণ। এছাড়া বড় ফেরি চলাচলের সুবিধার্থে যমুনায় নাব্যতা ফেরাতে খনন কাজ চালানো হবে। অন্যদিকে বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়ক সম্প্রসারণের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।