নিখোঁজের ২২ বছর পর ফিরে এলেন আমেনা

বগুড়ার ধুনট উপজেলার আমেনা খাতুন ২২ বছর আট মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমেনা মারা গেছেন বলে ধরে নেন সন্তানরা। অবশেষে নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। সরকারি সহযোগিতায় নেপালের একটি বিশেষ বিমানে সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন আমেনা। দীর্ঘদিন তার খোঁজ না থাকায় সন্তানদের ভোটার আইডিতে আমেনাকে মৃত দেখানো হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।

আমেনার নাতি আদিলুর রহমান আদিল বলেন, দাদিকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছি।দাদি সবাইকে চিনতে পেরেছেন। তবে তিনি কীভাবে বিদেশে গেছে তা জানাননি। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরতে পেরে অনেক খুশি দাদি। রাতেই ছোট চাপড়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো আমরা।

আমেনার নাতি নন্দীগ্রাম রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ আদিলুর রহমান আদিল বলেন, দাদা আজগর আলী প্রামাণিক ১৯৯৬ সালে মারা যান। দাদি আমেনা খাতুন প্রায় ৪০ বছর মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তার তিন ছেলে আমজাদ হোসেন প্রামাণিক, ফটিক মিয়া প্রামাণিক ও ফরিদ মিয়া প্রামাণিক এবং মেয়ে আম্বিয়া খাতুন। ছেলে ফটিক মিয়া ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে যান। ডিসেম্বর মাসে দাদি আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজ করেও সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের সবাই ধরে নেন আমেনা মারা গেছেন। তাই ছেলেমেয়ের ভোটার আইডিতে তিনি মৃত। 

আদিলুর রহমান আদিল জানান, গত রমজানের ঈদের আগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তারা আমাদের জানান, আমেনা খাতুন নেপালে আছেন। ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করি আমরা। গত ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলম ভিডিওকলে আমেনার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। তখন আমেনা তার সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারেন।

পরদিন ফেসবুকে মাসুদ আলম পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন। ২২ বছর আগে আমেনা খাতুন অভিমানে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তাকে খুঁজে না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন মা বেঁচে নেই। আমেনার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর।

মাসুদ আলম জানান, নেপালে সুনসারি জেলার ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র যমুনা গৌতম পোখরালের তত্ত্বাবধানে এক বাংলাদেশি নারী আছেন উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি মোবাইল ফোনে আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ১ জুন কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারিতে যান। তাকে সহযোগিতা করেন সুনসার বাঙালি সমাজের সভাপতি বিপ্লব ঘোষ। পরে আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানা যায়। সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর আমেনা খাতুনকে সরকারি সহযোগিতায় বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

আদিল জানান, সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিশেষ বিমানে দাদি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। তারা সাত জন আমানাকে আনতে গ্রহণ করেছেন। দাদিকে নিয়ে মাইক্রোবাসে ধুনটের ছোট চাপড়া গ্রামে রওনা হয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন পর দাদিকে ফিরে পাওয়ায় আদিল বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।