এক বিদ্যালয়ের ১৫০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

বগুড়ায় করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ‘ঝরে পড়েছে’ ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে এক বিদ্যালয়ের ১৫০ ছাত্রীসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। অনেকে মা-বাবার সঙ্গে কর্মস্থলে গেছে। কেউ অন্য এলাকায় চলে গেছে। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমেছে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা ‘ঝরে পড়া’ শিক্ষার্থীর সঠিক সংখ্যা বের করতে না পারলেও এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বলে জানিয়েছেন। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় তালিকাভুক্ত ৮৬২টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় ৪৩৯টি, কলেজ ৮২টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২৮টি এবং মাদ্রাসা ৩১৩টি। এর বাইরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, করোনার পর বিদ্যালয়গুলো খুললে শহরের চেয়ে গ্রামের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই এখনই কত শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তা বলা সম্ভব নয়। তবে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছি আমরা।

দেলুয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

সারিয়াকান্দির পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাকী মোহাম্মদ জাকিউল আলম জানান, তার প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৯৯৭ ছাত্রী। করোনাকালে ১৫০ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে।

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাবেদ আকতার বলেন, জেলার ১২ উপজেলায় এক হাজার ৬০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থী দুই লাখ ৩১ হাজার ৯৫৮ জন। গত দেড় বছরে করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। অনেকে এলাকা থেকে অন্যত্র চলে গেছে। ঝরে পড়ার সংখ্যা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। কারণ করোনায় ভয়ে এখনও কিছু শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে আসছে না। তাদের বিদ্যালয়মুখী করতে চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের ধারণা, ১০ শতাংশ ঝরে পড়েছে।

সারিয়াকান্দির বাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণির আট শিক্ষার্থীর পাঁচ জন উপস্থিত আছে। বাকি তিন জন নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা খাতুন বলেন, করোনার কারণে উপস্থিতি কম। 

বাগবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে আগে ১৮ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। বিদ্যালয় খোলার পর ৭-৮ জন উপস্থিত থাকছে। প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু শিক্ষার্থী মা-বাবার সঙ্গে কারখানায় কাজ করতে চলে গেছে। কারও বিয়ে হয়ে গেছে।

বাগবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ৭-৮ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে

দীঘলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিদিন ২০-২৫ জন উপস্থিত থাকে। আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আট জনের মধ্যে ছয়জন উপস্থিত থাকে। এ ছাড়া হিন্দুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ জনের মধ্যে নয় জনকে উপস্থিত পাওয়া গেছে। করোনাকালে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।

দারুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, এক কিলোমিটারের মধ্যে ৩-৪টি প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। করোনার কারণে আরও কমেছে।

সারিয়াকান্দি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, উপজেলায় ১৬৮টি বিদ্যালয়ে ২১ হাজার ৪৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনার পর উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। এখনও ঝরে পড়ার সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ২৮টি বিদ্যালয়ে ১৯ হাজার ৮৫১ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতি কম। তবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ প্রতিদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।