বগুড়া বিমানবন্দর চালুর সম্ভাবনা

বগুড়ায় বিমান চলাচল শুরু হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি প্রতিনিধি দল বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। সোমবার বেবিচক সদর দফতরের প্রশাসন বিভাগের উপ-পরিচালক (সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) বেগম ইশরাত জাহান পান্নার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বগুড়া যায়।

ইশরাত জাহান পান্না জানান, আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের কাছে এ ব্যাপারে তারা রিপোর্ট দেবেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিমানবন্দর চালু হলে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি জনগণ স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত এবং উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে পৌঁছে দিতে পারবেন।

বিমানবন্দর পরিদর্শনে বেবিচকের প্রতিনিধি দলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এককালের শিল্পনগরী বগুড়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্বল্প সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় বিমান বন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সরকারের কাছে এ দাবি উত্থাপনের অভাবে উদ্যোগটি থমকে যায়। পরে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে বগুড়া বিমানবন্দর স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তা নির্মাণসহ সব অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ২০০০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও লোকসানের আশঙ্কাসহ নানা কারণে শেষ পর্যন্ত বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু হয়নি। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকার সেখানে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে। বর্তমানে সেখানে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। বগুড়ার শিল্পোদ্যোক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে বগুড়া বিমান চালুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে তিন হাজার ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ, তেল সংরক্ষণাগার নির্মাণ এবং যাত্রী ও মালামাল লোড-আনলোডসহ অন্যান্য কাজে আরও একশ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, ২০১৮ সালে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। অনুমতি পাওয়া গেলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ জেলা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সবদিক থেকে এগিয়ে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপনে আসছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। অনেক উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। সড়কপথে ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসতে ছয় থেকে দশ ঘণ্টা লাগে। তাই এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাণিজ্যিকভাবে বিমান সার্ভিস প্রয়োজন।’

বগুড়া শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল জানান, স্টেডিয়ামটি আইসিসি থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেটারদের যাতায়াত সমস্যাসহ নানা কারণে এ ভেন্যুতে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না। এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করতে হলে নতুন করে আইসিসির কাছে আবেদন করতে হবে। তবে বিমান যোগাযোগ ছাড়া এটা আদায় করা সম্ভব নয়।’

বগুড়ার পাঁচ তারকা মম ইন হোটেল ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হায়দার জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় বিমানবন্দর থাকার পরও জনগণ সেবা পাচ্ছে না। তারা জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তারা বিসিএল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে হেলিকপ্টার চালু করেছেন। এখানে প্রতি ১০ মিনিট জনপ্রতি চার হাজার টাকায় সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে।

বগুড়ার হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সূত্র জানায়, প্রতি বছর এ জেলায় গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার বিদেশি পর্যটক আসেন। এখানে পুণ্ড্রনগরী মহাস্থানগড় ছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা আছে। এখানে পর্যটকের আগমন বাড়াতে বিমানবন্দর চালু করা প্রয়োজন।

বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জানান, বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া বিমানবন্দর থাকলেও দুই যুগেও চালুর উদ্যোগ নেই। এ ব্যাপারে তিনি সংসদে আলোচনা করেন। গত ১ মার্চ বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর জন্য চিঠি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচকের উপ-পরিচালক ইসরাত জাহান পান্নার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্ভাব্যতা যাচাই ও খোঁজ-খবর নিতে সোমবার সকালে এখানে আসেন। পরিদর্শন শেষে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বেগম ইসরাত জাহান পান্না জানান, তারা বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বেবিচকের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের উপ-পরিচালক মাসুদ রানা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আমিনুল হাফিজ, কমিউনিকেশন নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা ও সিনিয়র ড্রাফটম্যান কবির হোসেন।