ছেলের লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে নির্বাচনি প্রচারণায় বাবা-মা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় সেপটিক ট্যাংক থেকে আব্দুল করিম নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার লাশ টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন বাবা-মা। এ ঘটনায় করিমের বাবা-মাসহ চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

আব্দুল করিম (১৮) পূর্বপাড়া গ্রামের করুনা বেগম ও আলহাজ আলী দম্পতির মেজো সন্তান। নরিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন করুনা বেগম।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে করুনা বেগম ও তার স্বামী আলহাজ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানান, করিমের লাশ বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়েছেন।

ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে করুনা বেগম ও আলহাজ আলী পুলিশকে জানিয়েছেন, করিম দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত। মঙ্গলবার রাতের খাবার শেষে ঘরে শুয়ে পড়ে। বুধবার ভোরে করিমকে ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ পাননি মা। এ সময় জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে করিমকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে ছেলের লাশ নামিয়ে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।

সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই বছর আগে তাদের পুত্রবধূ চিঠি লিখে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ছেলে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ জানলে আবার অনেক অর্থ খরচ হবে। ভিটেবাড়ি বিক্রি করতে হবে। এ জন্য ছেলের লাশ গুম করেছেন তারা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল হোসেন ও শাহজাদপুর থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান।

ওসি শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, বিকাল ৪টার দিকে সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য করিমের বাবা-মা, ভাই ও ভাবিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

নরিনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, নরিনা ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী করুনা বেগম। ছেলের লাশ গুম করে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা কল্পনাও করিনি ছেলের সঙ্গে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছেন বাবা-মা।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছেলের লাশ গুম করে নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। গত ১০ নভেম্বর ৪র্থ ধাপে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী আগামী মাসের ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। আগামী ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। তারপর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে যাছাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে।