কাঁচা আমের জিলাপি কিনতে ভিড়

আমের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহী অঞ্চল। আমের দুটি প্রজাতি আন্তর্জাতিক বাজারে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও আমের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে গবেষণা তেমন একটা হয়নি। প্রথমবারের মতো কাঁচা আমের জিলাপি ক্রেতাদের সামনে এনেছেন আরাফাত রুবেল নামে এক ব্যবসায়ী। 

এই জিলাপি আম দিয়ে নতুন খাবার উৎপাদনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। অবশ্য এর আগে আমের মিষ্টি, খেজুর রসের মিষ্টি ও মাসকলাইয়ের জিলাপি তৈরি করে ক্রেতাদের নজর কেড়েছেন এই ব্যবসায়ী। আরাফাত রুবেল রাজশাহীর ‘রসগোল্লা’ প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার হাত ধরে রাজশাহীর মিষ্টান্ন জগতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো কাঁচা আমের জিলাপি বাজারে আনে রসগোল্লা। ইফতারিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে এই আয়োজন করেছে তারা।

এই জিলাপি আম দিয়ে নতুন খাবার উৎপাদনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে

শনিবার (০৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টায় নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে রসগোল্লার বিক্রয় কেন্দ্রে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড়। কাঁচা আমের জিলাপির কথা সবার মুখে মুখে। নতুন আইটেম হওয়ায় সবাই কমবেশি কিনছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে অস্থায়ী চুলা বসানো হয়েছে। সেখানে জিলাপি ভাজছেন কারিগর মাসুম আলী। ইফতারের আগ পর্যন্ত তার দম ফেলার সময় ছিল না। ভাজা শেষে রসে ডুবাতে না ডুবাতেই প্যাকেট বন্দি হচ্ছে। ক্রেতাদের অর্ডারের চাপে দেওয়ার সময় পাচ্ছিলেন না বিক্রয়কর্মীরা।

জিলাপি তৈরির কারিগর মাসুম আলী বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় ধরে জিলাপি বানাই। এতদিন সাধারণ জিলাপি বানিয়েছি। এবার কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি করছি। অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে কাঁচা আমসহ কিছু নতুন উপকরণ যোগ করছি। জিলাপি অনেক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি।’

তিনি বলেন, ‘ময়দা, কাঁচা আম, চালের গুঁড়া, ম্যাঙ্গো চকলেটের ফ্লেভার, কুমড়া ব্লেন্ড, চিনি, কর্নফ্লাওয়ার, বেকিং পাউডার, ভিনেগার, চিনির সিরা তৈরির উপকরণ, জাফরান, তেল, পানি, গোলাপ জল ও এলাচের গুঁড়া দিয়ে এই জিলাপি তৈরি করতে হয়।’

প্রথমবারের মতো কাঁচা আমের জিলাপি বাজারে আনে রসগোল্লা

রসগোল্লার উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল বলেন, ‘রোজায় ইফতারিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। প্রথমদিন থেকেই কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি করছি। ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়।’

তিনি বলেন, ‘আমি কৃষি নিয়ে কাজ করছি। নতুন কিছু তৈরি করবো, এই চিন্তা থেকে কাঁচা আমের জিলাপির সৃষ্টি। কিন্তু এত কম সময়ে এতটা সাড়া পাবো ভাবিনি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে পারছি না। কারণ কাঁচা আমের সংকট রয়েছে। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও ছোট। সবমিলে পরিমাণমতো তৈরির চেষ্টা করছি। তবে কোয়ালি ঠিক রাখছি। কেজি ২৫০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার কাঁচা আমের জিলাপি বিক্রি করছি।’

রাজশাহী নগরীর ভদ্রা ও উপশহর নিউ মার্কেটে অবস্থিত রসগোল্লার দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে কাঁচা আমের তৈরি জিলাপি পাওয়া যায়। ২৫০ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই জিলাপি।

প্রথমবারের মতো কাঁচা আমের জিলাপি ক্রেতাদের সামনে এনেছেন আরাফাত রুবেল

নিউ মার্কেটের রসগোল্লার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আধা কেজি জিলাপি কিনেছেন আশরাফ আলী। তিনি বলেন, ‘কাঁচা আমের জিলাপির নাম আগে শুনিনি। ইফতারি কিনতে এসে চোখে পড়লো। দেখতে অনেক সুন্দর। নতুন জিলাপি হওয়ায় কিনেছি। স্বাদ কেমন খাওয়ার পর বোঝা যাবে।’

নগরীর বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রসগোল্লা থেকে এর আগে মাসকলাইয়ের জিলাপি কিনেছি। আজ কাঁচা আমের জিলাপি কিনলাম।’

এদিকে, নগরীর বাসিন্দা রুশো রাশেদুল হক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘কাঁচা আমের জিলাপির কথা শুনে রসগোল্লার ভদ্রা আউটলেটে গেলাম, সেখানে না পেয়ে গেলাম উপশহর নিউ মার্কেটে। সেখান থেকে নিলাম। ইফতারিতে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা খেলাম জিলাপি। পাকা আমের রসগোল্লা যতটা তৃপ্ত করেছিল, কাঁচা আমের জিলাপি ততটাই হতাশ করলো। বিন্দুমাত্র কাঁচা আমের ফ্লেভার নেই। পাড়া-মহল্লার দোকানের সাধারণ জিলাপির মতই স্বাদ, শুধু লালের বদলে রঙটা সবুজ, এই পার্থক্য। নম্বর দিতে ইচ্ছে করছে না।’