নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকের ৫৭ পদের ৪১টিই শূন্য

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও শয্যা নেই। ৫৭ চিকিৎসকের বিপরীতে ৪১টি পদই শূন্য। এর মধ্যে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও লাভ হয়নি।

হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২৮১, কর্মরত রয়েছেন ১৯৮ জন। এর মধ্যে ১৬ জন চিকিৎসক, ১৪৪ জন নার্স, ১৮ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ২০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর রয়েছেন। ১৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে জরুরি বিভাগে একজন, বহির্বিভাগে ৯ জন এবং বাকি ছয় জন চিকিৎসক দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীসহ প্রতিদিন দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। ফলে চিকিৎসক সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে শয্যা সংকট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্তর্বিভাগে শতশত রোগী চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরুরি বিভাগে মাত্র একজন মেডিক্যাল অফিসার থাকায় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে সেবা দেওয়া হয়। তৃতীয় ও চতৃর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট তো আছেই।’ 

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ চোখের অপারেশন বন্ধ আছে চিকিৎসক সংকটে। অর্ধ যুগ ধরে জনবল সংকটে ভুগছে কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগটি। ফলে বাক্সবন্দি আছে ওই বিভাগের ২৫-৩০ লাখ টাকার মেশিনসহ ১০ শয্যার ইউনিটটি।

বিহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে জেলা শহরের নিউ বাবু পাড়ার ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে পারলাম। সিরিয়াল পেয়ে ওষুধ নিতে দুপুর গড়িয়ে বিকাল। এখানে জনবল সংকট বড় ধরনের সমস্যা। নামেই জেনারেল হাসপাতাল, ডাক্তার নেই।’

মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সার্জারি ওয়ার্ডের রোগি রোকেয়া বেগম (৪৫)। তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে এপেনডিক্স অপারেশনের ব্যথায় ভর্তি হলেও বিছানা পাইনি।’

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুর রহিম বলেন, ‘এই বিভাগে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছে। ইউনিট চালাতে একজন বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল কর্মকর্তাসহ ১০ জন চিকিৎসক ও ২০ জন প্রশিক্ষিত নার্স প্রয়োজন। এছাড়াও আইসিইউ এবং সিসিইউ’র জন্য প্রয়োজন আলাদা ব্যবস্থা। এখানে এসবের কিছুই নেই।’

রেডিওলজিস্ট মো. রেজাউল আলম বলেন, ‘কোনোরকমে চলছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি। অতি পুরনো মেশিনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় রোগীদের বাইরে থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হচ্ছে।’

আরএমও বলেন, ‘হাসপাতালের ৫৭ চিকিৎসকের বিপরীতে ৪১টি পদই শূন্য রয়েছে। যার শতকরা হার ৭২ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী জেনারেল হাসপাতালে লোকবল থাকার কথা ১৯৮ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জরুরি বিভাগসহ বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি রয়েছে আসন সংকট। রোগীর সেবার স্বার্থে কোনও রকমে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি অতি পুরনো। বারবার ঠিক করতে হয়। রোগীরা বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।’ একটি নতুন মেশিনের দাবি জানান তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু-আল হাজ্জাজ বলেন, ‘হাসপাতালে প্রায় ৭২ শতাংশ পদ খালি। প্রয়োজনের তুলনায় কম চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি প্রশাসনিক অনুমোদন পায় ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ আর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি পায় ২২ আগস্ট ২০২১।