‘৪ দিন পানিবন্দি, কবে পাবো ত্রাণ’

গত শনিবার রাত ২টায় বন্যার পানি ঘরে ঢুকে। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র ছাড়া কিছুই নিয়ে বের হতে পারিনি। চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না করার খাবার জুটছে না। শুকনো খাবারে খুব কষ্টে দিন পার করছি। গবাদিপশু নিয়েও পড়েছি বিপাকে। তবে এই চার দিনে কোনও জনপ্রতিনিধি খোঁজ নেননি। জোটেনি কোনও ত্রাণ। 

এভাবেই নিজের দুর্দশার কথা বলছিলেন বানভাসি শাহিদা বেগম। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী গ্রামের বাসিন্দা তিনি।  

শাহিদার সঙ্গে কথা বলতে দেখে এগিয়ে আসেন জাহানারা বেওয়াসহ আরও কয়েকজন নারী। তাদেরও একই অবস্থা। তারা জানান, বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকজন প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে বের হতে পারলেও বেশিরভাগই এক কাপড়ে ঘর ছেড়েছেন।  

জাহানারা বেওয়া বলেন, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছি। রাতে সাপ-পোকার ভয়ে ঘুম থাকে না।  

যমুনার পানিতে ডুবেছে বাড়িঘরদুর্দশার কথা জানিয়ে একই গ্রামের সামলা বেগম বলেন, বানের পানিতে সবকিছু ডুবেছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে বাঁধে উঠেছি। রান্নার করার মতো কিছু নেই। 

মেম্বার-চেয়ারম্যানরা খোঁজ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার দিন ধরে এখানে আছি। এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ নেয়নি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নদীর অভ্যন্তরের চরাঞ্চলগুলো একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

এ অবস্থায় অনেকেই  এলাকার উঁচু বাঁধ বা নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় খুবই কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকেই আবার রাস্তার ধারে নির্মাণের চেষ্টা করছেন অস্থায়ী ঘর। এদিকে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের শত শত একর ফসলি জমি। 

ত্রাণ সহায়তা এবং অন্যান্য বিষয়ে কথা হয় ছোনগাছা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচঠাকুরী গ্রামের ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বন্যাকবলিতদের তালিকা তৈরি করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবো। 

গত কয়েক দিনে বানভাসিদের কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মেম্বার। চাইলেই আমরা সবকিছু করতে পারি না।

ছোনগাছা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিমলা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. তারেকুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় বন্যার অবস্থা খুবই খারাপ, বানভাসিদের খোঁজ-খবর রাখছি। তবে সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোনও বরাদ্দ আসেনি। ইউএনও স্যার আমাদের বানভাসিদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা তালিকা তৈরি করছি। বরাদ্দ আসলে বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, আমার ইউনিয়নের ৫টা ওয়ার্ডে বন্যার পানি ঢুকেছে। যাদের বাড়িতে পানি উঠেছে তারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সবার খোঁজ-খবর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইউএনও’র নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে বানভাসিদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিষদে কোনও বরাদ্দ আসেনি বলে জানান তিনি। 

একই ধরনের তথ্য জানান সিরাজগঞ্জ সদরের কালিয়হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুস সবুর।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি বলেন, বানভাসিদের তালিকা তৈরির জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা তালিকা তৈরি করছেন। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। বরাদ্দ এলে বিতরণ করা হবে।