শিয়ালের আক্রমণে আহত ২৭

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে শিয়ালের আক্রমণে কমপক্ষে ২৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিয়ালের কামড়ে আহত হয়েছেন ১৮ জন। যাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর চার জনকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হয়।

বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানান, মঙ্গলবার (২৮ জুন) জুন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পান বরজে পান ভাঙতে গেলে ৮ থেকে ১০টি শিয়ালের এক দল কৃষকদের ওপর হামলা করে। আগে থেকেই ওই পান বরজে শিয়ালগুলো লুকিয়ে ছিল। প্রথমে একজনের ওপর হামলা করলে অন্যরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শিয়ালের কামড়, আঁচড় ও পালাতে গিয়ে ২৭ জন আহত হন। এদের মধ্যে কামড় ও আঁচড়ে আহত হন ১৮ জন। পরে গ্রামবাসী ধাওয়া করে একটি শিয়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও অন্যগুলো পালিয়ে যায়।

বাগমারা উপজেলার শ্রীপুরের গ্রামের লোকজন জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিজের পান বরজে কাজ করতে যান মনসুর। বরজে ঢুকতেই শিয়াল এসে তাকে ঘিরে ধরে কামড়ানো শুরু করে। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করেন। পরে গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর গ্রামের অন্য শ্রমিকেরা আলাদা-আলাদা বরজে গেলে তারাও আক্রমণের শিকার হন। এভাবে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন কৃষকসহ অন্যরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আরও এক কৃষককে আক্রমণ করতে গেলে লোকজন একটি শিয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে।

তারা জানান, শিয়ালটি কামড়াতে এসেছিল। এ সময় লোকজন জড়ো হয়ে ধাওয়া দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। শিয়ালকে পালানোর সুযোগ দেওয়া হলেও না পালিয়ে আক্রমণ করে। এ জন্য বাধ্য হয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইনতাজ আলী বলেন, শ্রীপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পান। নদী ও বিলের ধারে বরজগুলো স্থাপন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিয়াল ছিল না। আর ৮-১০ বছরের মধ্যে মানুষের প্রতি আক্রমণ এটাই প্রথম। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

আহত আমিনুল ইসলাম জানান, পান বরজে শিয়াল থাকে। কোনও দিন সেগুলোকে মারেননি। শিয়ালও কোনও দিন আক্রমণ করেনি। দিনের বেলায় তারা পান বরজে নির্বিঘ্নে কাজ করেন। তবে রাতের বেলায় শিয়ালগুলো আহারের জন্য বের হয়। কেন আজকে (মঙ্গলবার) এভাবে কামড়ানো শুরু করলো, তা বুঝতে পারছেন না। 
শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা বলেন, শিয়ালকে না মারার জন্য লোকজনকে সর্তক হয়ে চলার জন্য বলা হয়েছে। সর্তক করে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তবে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বাগামারা উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বন্যপ্রাণিকে মেরে ফেলা ঠিক নয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম রাব্বানি বলেন, শিয়ালের কামড় ও আঁচড়ে আহত ১৮ জনের মধ্যে চার জনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান আলী, আব্দুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও আফসার মৌলভি। এ ছাড়া অপর ১৪ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন নিতে রেফার্ড করা হয়েছে।

আহত অন্যদের মধ্যে হাবিবুর রহমান, আব্দুল মান্নান, নাঈম হোসেন, মকবুল হোসেন, আইনাল হক, আব্দুস সালাম, কাশেম আলী, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল গফুর, রুহুল আমিন, মুনসার রহমান, আজিজুল ইসলাম ও তার চার বছর বয়সের মেয়ে আফসানা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, মঙ্গলবার ভোরে পান বরজে কৃষকরা শিয়ালের হামলার শিকার হন। শিয়ালগুলো পান বরজে লুকিয়ে ছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকায় কামড়ে বেশি আহত এমন চার জনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের মধ্যে যারা কামড়ে বা আঁচড়ে আহত হয়েছেন তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিতে হবে।