দেশি মাছের সংকট, ফাঁকা পড়ে আছে আত্রাইয়ের শুঁটকি চাতাল

উত্তর জনপদের মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে দেশি প্রজাতির মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমেও শুঁটকি তৈরিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের জীবন-জীবিকায় পড়েছে বিরূপ প্রভাব। মৌসুমের শুরুতে শুঁটকি তৈরির জন্য চাতাল প্রস্তুত করা হলেও মাছের অভাবে সেগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, আত্রাই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং খাল-বিলের পানি শুকিয়ে আসায় দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে গেছে। এতে কমেছে শুঁটকি উৎপাদন। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণও মাছ সংকটের অন্যতম কারণ।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মোজাহার মোল্লা বলেন, ‘আমাদের এলাকার শুঁটকির প্রধান মাছ পুটি, টাকি ও খলিসা। এক মণ পুটি শুকিয়ে ১৫ কেজি, চার মণ টাকি থেকে এক মণ এবং তিন মণ খলিসা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়। তবে খাল-বিলে মাছ না থাকায় এবার শুঁটকির ব্যবসা ভালো হবে না।’

ব্যবসায়ী আব্দুস ছাত্তার সরদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুঁটকি ব্যবসায় জড়িত। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সঙ্গে প্রচুর শ্রম দিতে হয়। রোদ-বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছি। অনেকে শুঁটতি তৈরির সাজসরঞ্জাম তৈরি করলেও মাছের অভাবে সেগুলো পড়ে রয়েছে। এবার ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে চলবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘শুঁটকি তৈরির সঙ্গে জড়িতদের স্বাস্থ্য-সম্মতভাবে শুঁটকি তৈরিতে গত বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ মৎস্য আহরণ এবং মা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আত্রাই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুঁটকি তৈরি শুরু হয়, চলে পৌষ-মাঘ পর্যন্ত। এ কয়েক মাস ব্যস্ত সময় পার করেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। আত্রাই আহসানগঞ্জ রেললাইনের দুই পাশে ও কেডিসি সংলগ্ন এলাকায় মাচায় শুঁটকি মাছ শুকানো হয়। কিন্তু এ বছর মাছের অভাবে অনেক মাচা ফাঁকা পড়ে আছে।’