সাবেক সেনা সদস্য হত্যা: ফাঁদে ফেলা তরুণীসহ গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা ল্যান্স কর্পোরাল জাকির হোসেন হত্যার ঘটনায় দুই নারীসহ প্রতারক চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন। রবিবার তাদের বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, বগুড়ার শাজাহানপুরের গন্ডগ্রামের আবুল খায়েরের মেয়ে সোমা আকতার লিয়া (২৫), একই উপজেলার লতিফপুরের মৃত লয়া মন্ডলের ছেলে তাইজুল ইসলাম (২৮), নন্দীগ্রামের রণবাঘার আবদুর রউফের মেয়ে রোপা আক্তার (২০) ও গাবতলীর কালাইহাটা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৩২)।

র‌্যাব-১২ বগুড়া সূত্র জানায়, শনিবার রাতে শহরের কলোনি এলাকার চিটাগাং আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে লিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেরপুর থেকে তাইজুল ইসলাম, মাঝিড়া থেকে রোপা ও মাদলা ব্রিজ এলাকা থেকে আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, রোপা প্রেমের ফাঁদে ফেলে সাবেক সেনা সদস্য জাকির হোসেনকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কৈগাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে লিয়া আগে থেকে ছিলেন। পরে তাইজুল, রাজ্জাকসহ ৬/৭ জন বাড়িতে ঢুকে অসামাজিক কাজের অভিযোগে জাকিরকে জিম্মি করেন। পরে তার কাছ থেকে নগদ দুই হাজার ৩০০ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

সন্ধ্যার দিকে সুযোগ বুঝে জাকির হোসেন ওই বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন আশরাফুল ইসলাম আশা নামে একজন ধাওয়া করে জাকিরের পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে প্রতারকরা পালিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৭টার জাকিরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার রাতেই জেলা পুলিশ শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ী পূর্বপাড়ার মৃত মিলনের ছেলে অস্ত্র মামলার আসামি আশরাফুল ইসলাম আশা (২৪) ও একই এলাকার শহিদুল ইসলাম খোকনের ছেলে মোস্তফা কামাল কমলকে (২৫) গ্রেফতার করে। তাদের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু পাওয়া যায়। তারা দুজন শনিবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আশা ও কমল সাবেক সেনা সদস্য জাকিরকে হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ উল্লেখ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, দুই নারীর সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাড়িতে এনে ব্ল্যাকমেইল করতো। তাদের নগ্ন ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতো। এই হত্যাকাণ্ডে মোট আট জন অংশ নেয়। গ্রেফতারকৃত চার জনের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।