মেলা থেকে মাছ কিনে জামাইরা যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ২০০ বছর আগে শিবগঞ্জের উথলীতে শুরু করেছিলেন নবান্ন উৎসবের। সে সময় উৎসব উপলক্ষে জামাইরা বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন। আর জামাই, মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের আপ্যায়নে বাবা-মায়েরাও কমতি রাখতেন না। মেয়ের জামাইদের আনা বড় মাছ শীতের নানা সবজি দিয়ে রান্না করে পাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন ধানের পিঠা-পায়েস থাকতো আপ্যায়নের তালিকায়। দীর্ঘদিনের চর্চায় এই আয়োজন সবার উৎসবে পরিণত হয়েছে। এবারও উৎসব উপলক্ষে বসেছে মাছের মেলা। সঙ্গে আছে মুড়ি-মুড়কি, মিষ্টান্ন ও বিভিন্ন তৈজসপত্রের দোকান। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) গভীর রাত পর্যন্ত। 

মেলার অন্যতম আয়োজক আজিজুল হক বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবান্ন উৎসব উপলক্ষে ২০০ বছর ধরে উথলী বাজারে মাছের মেলা বসে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্থানীয়রা মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনকে নতুন আলু দিয়ে মাছ রান্না করে খাওয়ান। মাছের পাশাপাশি স্বজনদের পিঠাপুলিও খেতে দেওয়া হয়। প্রতিটি বাড়িতে এখন চলছে হরেক রকমের শীতের পিঠা তৈরির আয়োজন। বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া মাছের মেলা শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলবে।

শিবগঞ্জের উথলী মেলা ছাড়াও বগুড়া সদরের মহাস্থান, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, কাহালুসহ বিভিন্ন উপজেলায় নবান্নে মাছের মেলা বসে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, উথলীর মাছের মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ ভিড় করছেন। হাটে এসেছে বাগাড়, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, বিগহেডসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ। এছাড়াও হাটে বিক্রি হচ্ছে নতুন আলু, কেশরসহ বিভিন্ন সবজি। হরেক রকম মিষ্টান্ন ও শিশুদের খেলনা, মাটির তৈজসপত্র বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানেও ভিড় দেখা গেছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মেলা এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে জামাই-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার মাছের দাম তুলনামূলক কম। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় বেচা-বিক্রি কম। তাই ব্যবসায়ীদের এবার লোকসান গুনতে হবে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি মেলায় অন্তত কোটি টাকার শুধু মাছ কেনাবেচা হয়। 

হাটে আসা প্রবীণ আফসার আলী (৭২) জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উপলক্ষে মাছ কিনতেন। প্রথা অনুসারে এলাকার নতুন জামাই মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতেন। এখনও এই প্রথা চালু আছে, তবে এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই; সব ধর্মবর্ণের মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে এক কেজি থেকে শুরু করে ২২ কেজি ওজনের কার্প, ১৫ কেজি ওজনের কাতল, ১১ কেজি ওজনের রুই ছাড়াও বিভিন্ন ওজনের চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্পসহ হরেক প্রজাতির মাছ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। 

শিবগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান সিরাজ বলেন, এবার মাছের বাজার মন্দা। যে মাছ আগের মেলায় ৮০০ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি, এখন তা ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছি না। 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তারা ইচ্ছা থাকলেও বড় মাছ কিনতে পারছেন না। তাই এবার সব মাছ ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হবে। 

গাইবান্ধা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী মোখলেসার রহমান বলেন, ২২ কেজি ওজনের একটি ব্ল্যাককার্প ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলার পাশাপাশি নতুন শাকসবজিও বিক্রি হচ্ছে। জমি থেকে তোলা নতুন আলু ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি আলু ও কেশর প্রতিকেজি ১২৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।