২ দিন আগেই সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা

রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে আগামী ৩ ডিসেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। কিন্তু এর আগেই ১০ দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক সমিতি। ভোর ৬টা থেকে বিভাগের সব জেলার বাস-ট্রাক চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পরিবহনের ভোগান্তি এড়াতে দুই দিন আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও পাশে ঈদগাহ মাঠে তাবু টানিয়ে নেতাকর্মীরা জমায়েত শুরু করেছেন। বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাত থেকেই শত শত নেতাকর্মী এই মাঠে তাবুতে অবস্থান করছেন। মাঠেই চলছে রান্না-খাওয়া। আজ সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমায়েত বাড়ছে।

আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ শনিবার, রাজশাহীর ৮ জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে এক লাখ নেতাকর্মী এসেছেন। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। আবার অনেকে রাস্তায় আছেন। বিকাল নাগাদ দেড় লাখ নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে চলে আসবেন।

রাজশাহী-২

বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে আসা আমিনুল ইসলাম নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস ধর্মঘটের কারণে বুধবার সকালেই বাসে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বিকালের মধ্যে এসে মাদ্রাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিয়েছি। এরপর রাতে তাবুতে অবস্থান করছি। মাঠেই রান্নার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানেই খেয়ে অবস্থান করছেন। শনিবার সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে অবস্থান করবো।’

পাবনা থেকে আসা হযরত আলী নামে এক কর্মী বলেন, ‘আমরা বুধবার সন্ধ্যায় এসে রাজশাহীতে পৌঁছেছি। মাঠে তাবুতে অবস্থান করছি। সমাবেশ সফল করে বাসায় ফিরবো।’

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে মানুষের দুর্ভোগ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে রাতেই দুটি পিকআপ ভ্যানে কর্মী-সমর্থক নিয়ে এসেছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। চালের বস্তা মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়েছেন তারা। তার পশ্চিম পাশে কড়ই গাছের নিচে এক সারি মানুষ তখনও ঘুমিয়ে ছিলেন। গাছের গায়ে লাগানো একটি পোস্টারে লেখা ‘নাটোর জেলা’। 

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিএনপি কর্মী হাবিবুর রহমান জানান, রাত ১১টায় তারা মাইক্রোবাসে এখানে এসে পৌঁছেছেন। সারা রাত খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছিলেন। ঠান্ডা আর মশার কামড়ে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেননি।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে ১৫ লাখ মানুষের সমাগমের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, বিএনপি দেশব্যাপী যে বিভাগীয় সমাবেশে করছে, তার মধ্যে রাজশাহীর সমাবেশই হবে সবচেয়ে বড়। সব বাধা পেরিয়ে এই সমাবেশ সফল হবে।

রাজশাহী-৩

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ বানচাল করতে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়েছেন। বিভাগজুড়ে এ পর্যন্ত শতাধিক  মামলা করা হয়েছে। তারপরও রাজশাহীতে দেশের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে। অন্তত ১৫ লাখ নেতাকর্মী যোগ দেবেন।’

বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘সমাবেশের আগে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীরা আগে আগেই আসতে শুরু করেছেন। তাদের থাকার জন্য আমরা শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলো ঠিক করেছিলাম। পুলিশ সবখানে গিয়ে বলে এসেছে, কেউ যদি বিএনপির লোকজনকে থাকতে দেয়, তাহলে তাকেই ধরে নিয়ে যাবে। এটা কেমন কথা ভাই? একটা সভ্য দেশে এটা হতে পারে?’

রাজশাহীতেই দেশের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা দূর থেকে আসা মানুষকে থাকতে দেবেন। প্রয়োজনে নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়াবেন। এভাবেই এখন আমাদের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। যেকোনও মূল্যে সমাবেশ সফল হবে এবং এই সমাবেশ থেকে ঢাকার সমাবেশের একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।’