দিনে ৫টি গরুর মাংস বিক্রি করেন কালু, কেজি ৫৮০ টাকা

বগুড়া শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। তবে সারা বছর জেলার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী মোড়ে নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই নামে এক ব্যক্তি ৫৮০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ মাংস কিনতে সেখানে জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের উপচে পড়া ভিড় পড়ছে। এ দোকানে কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ টাকায়। স্থানীয় পুলিশের চাপে ৩০ টাকা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগও উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী গ্রামের নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই (৬০) ২৬ বছর ধরে মাংস ব্যবসা করছেন। বিভিন্ন হাটবাজার থেকে গরু কিনে এনে সেটি জবাই করে টাটকা মাংস বিক্রি করেন। কালু কসাইয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে হোসাইন আল মাহমুদ অনার্সে ও ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। হোসাইন আল মাহমুদ লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকে ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন।

আগে বাগবাড়ি বাজারে দোকান ছিল। তখন শহরে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা এবং বাগবাড়ি হাটে ৫৫০ টাকা ছিল। সেই সময়ে তিনি ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন মাংস। এতে দিন দিন তার দোকানে ক্রেতা বাড়তে থাকে। একটি গরু জবাই করলে হাটের হাটের ইজারাদারকে চার হাজার টাকা টোল দিতে হয়। এ নিয়ে ইজারাদারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি সেখানে ব্যবসা না করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় এক বছর আগে বাড়ির কাছে শিমুলতলী তিনমাথা মোড়ে মাংসের দোকান দেন।

তার দোকান বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী মোড়ে। তার দোকান মানুষের কাছে খুব পরিচিত। শহর থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় অটোরিকশায় যাতায়াত করা যায়। এই ভাড়া খরচ করেও অনেকে তার দোকানে মাংস কিনতে যান।

শুক্রবার সকালে গাবতলীর শিমুলতলী তিনমাথা মোড়ে কালু কসাইয়ের ‘গোশত ঘরে’ গিয়ে দেখা দেখা গেছে, ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। বগুড়া শহর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার ক্রেতারা মাংস কিনতে লাইন ধরেছেন।

বগুড়া শহরের আটাপাড়ার ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে মাংস কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি পাঁচ কেজি মাংস কেনেন। শহরে ৭০০ টাকা কেজি হলেও ৫৮০ টাকা দরে কেনায় তার ৬০০ টাকা সাশ্রয় হয়। যদিও মোটরসাইকেলে তার ৫০ টাকার পেট্রোল খরচ হয়েছে।

bogra2

পার্শ্ববর্তী সোনাতলা উপজেলার স্কুল শিক্ষক মতিউর রহমান ফেসবুকে দেখে কালুর দোকানে মাংস কিনতে আসেন। নিজের জন্য ছয় কেজি ও এক প্রতিবেশীর জন্য চার কেজি মাংস কেনেন। প্রতি কেজিতে শতাধিক টাকা সাশ্রয় হওয়ায় তিনি খুব খুশি।

সারিয়াকান্দির হোটেল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম তার হোটেলের জন্য ১৫ কেজি মাংস কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, কালু কসাইয়ের কাছ থেকে মাংস কিনলে তার বেশি লাভ হয়। তবে মাংসের দাম কম হলেও ইচ্ছামতো কেনা যায় না। কসাই গরুর মাথা ও চামড়া বাদে তার ইচ্ছামতো তেল ও হাড় দিয়ে থাকেন।

গাবতলীর বালিয়াদীঘি গ্রামের ব্যবসায়ী সামসুল ইসলাম জানান, তিনি আগে থেকে ফোনে কালু কসাইকে ১০ কেজি মাংস আলাদা করে রাখতে বলেছিলেন। তাই তিনি এসে খুব সহজে মাংস পেয়েছেন।

ওই কসাইয়ের এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েকদিন আগে ৫৫০ টাকা কেজি দরে গোশত বিক্রি করা হতো। হঠাৎ করে কেজি প্রতি ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের চাপে মাংসের দাম বাড়াতে বাধ্য হন। যদিও এ বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী মুখ খুলতে রাজি হননি।

কালু কসাই জানান, আগে বাগবাড়ি হাটে দিনে একটা গরুর মাংস বিক্রি করতে পারতেন না। এখন সপ্তাহে ৩০-৪০টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন। সপ্তাহের অন্যদিন ৪-৫টি হলেও শুক্রবার ৯-১০টা গরু জবাই করতে হয়। চার জন কর্মচারীর মজুরি বাদ দিয়ে গরু প্রতি ৫০০ টাকা থাকলেও মাসে তার অর্ধ লাখ টাকা লাভ থাকে। তার মতো অন্য কসাইরা হাটের বাইরে দোকান দিয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন। এতে লাভ কম হলেও মানুষের উপকার হবে।

তার ছেলে হোসাইন আল মাহমুদ জানান, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ও সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম মাংস কিনতে পারছেন। যদিও আগে তারা পাইকারি এক মণ থেকে তিন মণ পর্যন্ত বিক্রি করতেন। এতে নিম্ন আয়ের মানুষরা মাংস কিনতে পারতেন না। তারা সবসময় সুস্থ গরু কিনে ক্রেতাদের সামনে জবাই করে টাটকা মাংস বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, কম দামে মাংস বিক্রি করায় অন্য ব্যবসায়ীরা (কসাই) আমাদের ওপর বিরক্ত। কম দামে বিক্রি না করতে চাপে আছেন। এরপরও প্রশাসন সহযোগিতা করলে সবসময় বাজার দরের চেয়ে কম দামে করা হবে।

গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান আল ইমরান জানান, নজরুল ইসলাম কালু কসাই সততার সঙ্গে কম লাভে মাংস বিক্রি করলে উপজেলা প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করবে।