রাজশাহীতে অবশেষে নামলো স্বস্তির বৃষ্টি। টানা দাবদাহের পর এই বৃষ্টিতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল পৌনে ৫টার পর আকাশে মেঘ দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীতে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। টানা ঘণ্টাখানেক হয়েছে বৃষ্টি। এরপর বিরতি দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে।
এর আগে সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল নগরীতে। এরপর চৈত্রের রোদ ও আগুন ঝরা তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন নগরীর মানুষজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহে ঝরে পড়ছিল আমের গুটি। শুকিয়ে চৌচির হয়েছে ধানক্ষেত। অবশেষ বৃষ্টিতে প্রাণ ও প্রকৃতিতে ফিরেছে সজীবতা।
এর আগে গত দুই দিন ধরে রাজশাহীর আকাশ মেঘলা ছিল। ঈদের দিন সকালে দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরলেও মুষলধারে বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
নগরীর রানীবাজার এলাকার মতিউর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর অবশেষে বৃষ্টি নামায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে। একটু ঠান্ডা আবহাওয়া পাচ্ছি। এতে তীব্র গরম থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাবো। তবে এই বৃষ্টি কয়েকদিন ধরে হওয়া উচিত। তাহলে মাটির গরম ও তাপ দূর হবে।’
মোহনপুর খাসিগ্রাম ইউনিয়নের বেলদা গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব বোরো জমির ধান কাটা হচ্ছে, বৃষ্টিতে সেগুলোর কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে আমার ক্ষেতের ধান এখনও পাকেনি। যারা ধান কাটেনি তাদের জন্য আশীর্বাদ এই বৃষ্টি। আরেকবার বৃষ্টি হলে আরও ভালো হবে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক কামাল হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কম। আকাশও মেঘলা ছিল। ২০ এপ্রিলের পর বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলাম আমরা। অবশেষে বৃষ্টি নেমেছে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে।’
এদিকে, রাজশাহীতে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত ১৩ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ তীব্র হয়। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ঘরে ছিল। একইসঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ১৫ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। এতে দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় আগুন ঝরা গরম এবং রাতে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ ছিল মানুষ। এই দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল লোডশেডিং। যা কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল গত ১৭ এপ্রিল; ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজকের বৃষ্টি আমের গুটি ও ধানের জন্য শুধু আশীর্বাদই নয়; বরং রক্ষাকবচ বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এই বৃষ্টি কৃষকদের প্রত্যাশিত ছিল। দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষিতে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমের গুটি ঝরে পড়ছিল। এই বৃষ্টি আম ও বোরো ধানের জন্য বেশি উপকারী এবং রক্ষাকবচ।’