রাজশাহীর গোপালভোগ আম বাজারে, কেজি ৪০-৫০ টাকা

আমের কয়েকটি উন্নত জাতের মধ্যে রাজশাহীর গোপালভোগ অন্যতম। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী সোমবার থেকে বাগানে বাগানে এই আম পাড়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) জেলার বিভিন্ন বাজারে এসেছে আম। প্রতি মণ ১৬০০-২০০০ (ছোটবড় মানভেদে) টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ টাকা। সরেজমিনে কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী ফারুক জোয়ারদার বলেন, ‘সোমবার প্রথমদিন ১২ মণ গোপালভোগ আম গাছ থেকে পেড়েছি। ২০০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। তবে খুচরা বাজারে এই আম ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’

বানেশ্বর বাজারে সোমবার ১৫ মণ গোপালভোগ এনেছি জানিয়ে দুর্গাপুর উপজেলার আম ব্যবসায়ী ওয়াজনবী বলেন, ‘তিন-চার দিন আগে থেকে আমার বাগানের আম পাকা শুরু হয়েছে। ১৫ মণ ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’

তবে গোপালভোগ ১৬০০-১৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বানেশ্বর আম বাজারের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘এখনও তেমন উন্নতমানের আম বাজারে আসেনি। তবে বাছাইকৃত আমের মণ সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’

জেলার বিভিন্ন বাজারে এসেছে গোপালভোগ আম

বাঘা উপজেলার আমের সুনাম দেশজুড়ে। ইতোমধ্যে বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম উঠেছে। দুই জাতের আমের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

এই উপজেলায় আট হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, ‘এ বছর উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করেছেন চাষিরা। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।’

গতবারের চেয়ে এ বছর আম বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে বাঘার আড়ানী বাজারের আড়তদার নওশাদ আলী বলেন, ‘মানভেদে গোপালভোগ ১৬০০-২০০০ টাকা ও গুটি ৮০০-১২০০ টাকায় মণ বিক্রি হচ্ছে।’

এখনও বাজার জমে উঠেনি জানিয়ে বাঘার শাহদৌলা ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘৪ মে থেকে প্রতিদিন এক ট্রাক করে গুটি এবং ১৫ মে থেকে গোপালভোগ সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জে পাঠাচ্ছি। তবে পুরোদমে পাড়া শুরু হলে প্রতিদিন চার-পাঁচ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাবো। আমার অধীনে কাজ করছেন দুই শতাধিক ব্যবসায়ী।’

এখনও বাজারে বেশি ক্রেতা আসেননি উল্লেখ করে পুঠিয়ার চিতলপুকুর এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতা ও পাইকার কম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে আসবেন, তখন বাজার জমবে।’

জেলার আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর ২৫ মে থেকে বাজারে আসবে। অন্যান্য জাতের আম এরপর বাজারে আসবে। হিসাব অনুযায়ী, সোমবার থেকে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। 

মানভেদে গোপালভোগ ১৬০০-২০০০ টাকা ও গুটি ৮০০-১২০০ টাকায় মণ বিক্রি হচ্ছে

রাজশাহীতে এ বছর এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার ১৫ মে থেকে এই আম পাড়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তার দুই-তিন দিন আগে থেকে আম পেকেছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।’

জেলায় আমের বাম্পার ফলন হলেও মৌসুমের শুরুতে খুচরা বাজারে দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। 

নগরীর বাশাররোড এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার নগরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে হাফ কেজি গোপালভোগ কিনেছি ৩০ টাকায়। যা গতবার প্রথমদিকে ১৫-২০ টাকায় কিনেছিলাম। সে হিসাবে এবার দাম বেশি।’

পাইকারিতে ৪০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে কেন ৬০ জানতে চাইলে বাঘার বাউসা গ্রামের ব্যবসায়ী সাজদার রহমান বলেন, ‘চাষির হাত থেকে পাইকার, তার হাত হয়ে আড়তদার, সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীর হাতে যাওয়ায় ধাপে ধাপে দাম ও খরচ বাড়ে। সবাই কিছু না কিছু উপার্জন করেন। এ জন্য খুচরা বাজারে দাম বেশি।’