বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে আ.লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে কী?

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত নেতা আবদুল জলিল খন্দকারের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বকুল। তিনি এই পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তার পরাজয়ের পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো- বগুড়া বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা, স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোন্দল ও ভোটারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকা। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ভোটার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক জানান, তালোড়া পৌরসভায় আমিরুল ইসলাম বকুল সরকারি বরাদ্দ সঠিকভাবে বণ্টন ও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তবে ভোটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তিনি মানুষদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতেন না। দলীয় কোন্দল ছিল না। নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে বকুলের জন্য কাজ করেছেন। যদিও মানুষের মনের কথা বলা সম্ভব নয়। ভোটারদের সঙ্গে তার দূরত্বের কারণে পরাজিত হয়েছেন।

পৌর বিএনপির সভাপতি গোলাম ফারুক জানান, নৌকার প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বকুলের ব্যবহার ভালো নয়। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। এ ছাড়া তাদের দলীয় কোন্দল ছিল প্রকট। তালোড়া বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। বিএনপি ভোট বর্জন করায় প্রার্থী হওয়ায় জলিল খন্দকারসহ ১২ জনকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। এরপরও নৌকা ঠেকাতে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা জলিল খন্দকারকে ভোট দিয়েছেন। তিনি (জলিল) আওয়ামী লীগের ভোটও পেয়েছেন। ফলে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় প্রসঙ্গে পৌরসভার সাধারণ ভোটাররাও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় দুপচাঁচিয়া পৌরসভা থাকার পরও প্রভাবশালী এক আমলার তদবিরে তালোড়া পৌরসভা গঠিত হয়। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১৫ মে নির্বাচনে আমিরুল ইসলাম বকুল মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর গত পাঁচ বছরে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। ফলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোন্দল ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ আছে, তিনি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন না। এই নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ রাজু মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বকুলকে নৌকা দেওয়া হয়। রাজুর অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। তারা গোপনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে ভোট দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বকুলের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তালোড়া পৌরসভার ভোটগ্রহণ হয়। জগ প্রতীকে আবদুল জলিল খন্দকার পেয়েছেন ছয় হাজার ৯২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমিরুল ইসলাম বকুল দুই হাজার ৯২৪ ভোট পেয়েছেন।