যমুনায় বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর-ফসলি জমি, আতঙ্কে চার গ্রামের মানুষ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোতে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া নৌঘাট সংলগ্ন এলাকায় গত এক মাস ধরে ভাঙন চলছে। এতে ইতোমধ্যে ২৩টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। 

ভাঙনের কারণে অনেকেই তাদের বসতভিটা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে চারটি গ্রামের ৩২ হাজার মানুষ ও ১৭টি সামাজিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগীরা ভাঙন ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভাঙন হুমকিতে রয়েছে কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া, টেংরাকুড়া, উত্তর টেংরাকুড়ি, পাকেরদহ, মোল্লাপাড়া ও গজার পাড়ার অন্তত ৩২ হাজার মানুষ। এসব গ্রামে ১০টি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া গ্রামের মাঠজুড়ে ছিল ভুট্টা, পাটসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল। কয়েকদিনের ভাঙনে যমুনা নদী ফসলগুলো কেড়ে নিয়েছে। নদী ভাঙন এলাকা থেকে ৫০ গজের মধ্যে বাস করছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে তাদের সারারাত জেগে থাকতে হয়। 

চর ঘাগুয়া গ্রামের তোতা মিয়া (৫৫) জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তারা এ গ্রামে পরিবার নিয়ে বাস করছেন। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবেীর বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করছেন। এ কাজ করতে গিয়ে খাওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না। 

গৃহবধূ আর্জিনা বেগম (৪৫) জানান, নদী ভাঙনের কারণে তার বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতদিনের সাজানো ঘরগুলো ভাঙতে খুব কষ্ট হচ্ছে। জমিজমা যা ছিল সব নদীতে বিলীন হয়েছে। এ বসতভিটায় তার ছোটবেলা বিয়ে হয়েছিল। ভাঙনের কারণে বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন

রান্না করতে করতে আর্জিনা জানান, অনেকদিনের বসতভিটায় এটাই তার শেষ রান্না।

কাজলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনিস মিয়া বলেন, এখনই নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া গ্রামটি নদীতে বিলীন হবে। গ্রামের উত্তর পাশে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে। কাজটি আরও এক কিলোমিটার বর্ধিত করা গেলে গ্রাম রক্ষা পাবে। ভাঙনরোধে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, সারিয়াকান্দির ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে লোকজন পাঠানো হয়েছে। তাদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।