সন্দেহভাজন আসামিকে ডিবি আটকের কয়েকঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু

বগুড়ায় একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি মুহুরি হাবিবুর রহমান হাবিবকে (৪০) গ্রেফতারের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে  ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকালে তাকে কোর্টের দরজা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যায় অচেতন অবস্থায় তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

আসামির মামা মঞ্জুরুল হক দাবি করেছেন, ডিবি পুলিশ তার ভাগ্নে ও মহুরিকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।

তবে ডিবি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান দাবি করছেন, শাজাহানপুরে বৃদ্ধা খুকি বেগম হত্যা মামলায় গ্রেফতার মনোয়ারা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকালে হাবিবকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে আনা হলে তিনি মনোয়ারাকে দেখে বুকে ব্যথা বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন, ওই আসামিকে মারধর করা হয়নি। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, পুলিশ অচেতন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনে। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ভর্তির পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

জানা গেছে, বৃদ্ধা খুকি বেগম বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া তালপুকুর গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করেন। খুকি তালপুকুরে ছেলেদের সঙ্গে থাকতেন। গত ৩ আগস্ট তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ ছিলেন। ৫ আগস্ট সকালে বাড়ির কাছে লিচু বাগানে তার বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া পায়। তার দুই পা (হাঁটুর ওপর) বিচ্ছিন্ন ছিল। কাছে এক পা পাওয়া গেলেও অপর পায়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। এই মামলায় ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছিল।

শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার পুলিশ জোড়া তালপুকুর গ্রামে মনোয়ারা (৬০) নামে এক নারীর বাড়ির সেফটিক ট্যাংকে নিখোঁজ ওই পা পাওয়া গেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়। তার বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাই তাকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তিনি সম্ভবত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া দামারপাড়ার আবদুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে মুহুরি হাবিবুর রহমান হাবিবের নাম প্রকাশ করেন।

ডিবি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে আদালতের সামনে থেকে হাবিবকে আটক করা হয়। তাকে ডিবি অফিসে আনার পর মনোয়ারাকে দেখে অসুস্থতাবোধ করেন। বুকে ব্যথা বলে চিৎকার করতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ৯টার দিকে মারা যান।

ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেন, হাবিবকে মারধর করা হয়নি। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তবে হাবিবের মামা বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সদস্য ও বগুড়া আইন কলেজের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক দাবি করেন, তার আপন ভাগ্নে ও মুহুরি হাবিব কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তার মুহুরির দায়িত্ব পালন করতো। মঙ্গলবার বিকালে তার (উকিল) মালতিনগর বাসায় ফাইলপত্র রাখার জন্য কোর্ট থেকে বের হলেই ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ডিবি অফিসে নিয়ে পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।