অসময়ে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে এলাকাবাসী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাটে হঠাৎ পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীগর্ভে যাওয়ার পথে বিআইডব্লিউটিএ নির্মিত ৬ নম্বর ফেরিঘাট।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে দৌলতদিয়া ৬নং ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ ৬ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে নদী ভাঙন শুরু হয়। এ সময় প্রায় ৬০ ফুট জায়গা নদীগর্ভে চলে যায়। আরও প্রায় ২০০ ফুট জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেকোনও সময় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা বারেক মৃধা বলেন, আর একটি চাপ পড়লে আমার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে যাবে। শুধু আমার বাড়ি নয়, এলাকার চায় শতাধিক পরিবার ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে যাওয়ার পথে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, দুবার নদীগর্ভে আমার বাড়ি বিলীন হয়। এই জায়গায় কোনোরকম বসবাস করে আসছি। আমার চারটি মেয়ে। দুই মেয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই মেয়ে অনার্সে পড়ালেখা করে। আমার এই দোকান ছাড়া কোনও আয়ের উৎস নেই। এবার নদীতে বাড়ি ভাঙলে আমাকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে।

নেকবার আলি নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রতি বছর শুধু আশ্বাস পাই। তবে নদী শাসনের কোনও বাস্তবতা দেখি না। এদিকে প্রতি বছর নদী ভাঙনের কারণে ফেরিঘাটের চিত্র ছোট হয়ে আসছে। আশপাশের শত শত বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ভাঙন শুরু হলে আজ সোমবার সকালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এসে তারা পরিদর্শন করেছে।

মাসুদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই এলাকা প্রতিবছর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। এরপরও নদী শাসনের স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না। তবে লোক দেখানোর জন্য বালু ভর্তি কিছু জিও ব্যাগ নদীতে ফেলে গুরু দায়িত্ব শেষ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ সময় একাধিক নারী বলেন, এখন না এলেও ভোট চাওয়ার সময় ঠিকই আসবে। বিপদের সময় কোনও মেম্বার-চেয়ারম্যানের চেহারা দেখা যাবে না। আমরা তো নিরুপায়। আমাদের দেখার কেউ নেই।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল বলেন, আমি ৬নং ফেরিঘাটে নদী ভাঙন কবলিত স্থান দেখে আসছি। ভাঙন রোধ করার জন্য জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে নদী শাসন না করলে একটি সময় দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কোনও চিহ্ন থাকবে না। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দৌলতদিয়ার নাম।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা বন্দরের উপ-প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, স্রোতের কারণে নদী ভাঙন শুরু হয়নি। নদীর পানি কমে যাওয়ায় কিছু বালু ভর্তি জিও ব্যাগ সরে গেছে। যে কারণে নদী পাড়ের ১/২টি স্থানে চাপ পড়ে গেছে। তবুও আমরা বালু ভর্তি কিছু জিও ব্যাগ নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করবো। পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে গেছে। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ৬০ ফুট ভেঙে গেছে।