X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র, রসুলপুরে এখন শুধু ভাঙন হাহাকার

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০১আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১২

কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছে না ব্রহ্মপুত্র। ভাঙন তীব্রতায় একে একে গ্রাস করছে বসতভিটা, আবাদি জমি, স্থাপনা ও গ্রামীণ সড়ক। সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন একের পর এক বাসিন্দা। কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে এমনই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে এখন শুধু ভাঙন হাহাকার। ব্রহ্মপুত্র সেখানে সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে।

ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে গত দুই সপ্তাহে কয়েকশ বিঘা আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। অন্তত ৯ টি পরিবারের বসতভিটা নদের গর্ভে চলে গেছে। হুমকিতে আছে আরও অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবার। ভাঙন হুমকিতে আছে ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মার্কাজ মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠসহ গ্রামের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুকনা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন প্রতিরোধে এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তা কোনও কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সব গিলে নিচ্ছে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ব্রহ্মপুত্র।

ভাঙন হুমকিতে হারাতে বসা বসতভিটা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বসতঘর সরিয়ে নেওয়া শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা নুর আলম ও তার পরিবার। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা এই যুবকের পরিবার চলতি বছর প্রায় এক একর জমি হারিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে। এখন ভাঙনের কবলে থাকা বসতি সরিয়ে নিয়েছেন অন্যের জমিতে।

নুর আলম বলেন, ‘আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। শুধু আমার পরিবার নয়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গ্রামের অনেক পরিবার এখন ভূমিহীন। তারা কোথায় থাকবে, কীভাবে ঘরবাড়ি বানাবে সেই চিন্তায় দিশাহারা। সরকার তো আমাদের দিকে তাকায় না।’

শুধু নুর আলম নন, তার প্রতিবেশী দিনমজুর আব্দুল বারেক ও রায়হানের চোখে মুখে হতাশা। বসতবাড়ি সরিয়ে অন্যের জমিতে সরঞ্জাম রাখলেও কোথায় ঘর তুলবেন সে ঠিকানা এখনও নির্ধারণ করতে পারেননি তারা। এক টুকরো জমি এখন তাদের অনিবার্য চাহিদা।

বারেক বলেন, ‘ঘর তোলার জায়গা তো নাই। নদী ভিটার কিনারে আসছে। ঘর না ভাঙলে তো জীবনটাও নদীত চলি যাইবে। এখন কোটেই ঘর করমো জানি না।’

নিরাপদ স্থানে ছুটছেন ভাঙনকবলিতরা

স্থানীয়রা বলছেন, শুকনো মৌসুম হলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে নদে পানি আর স্রোত বেড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভাঙন তীব্রতা। গত দুই বছরে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে ইউনিয়নের প্রায় হাজার বিঘা আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। শতাধিক বাসিন্দা বসতভিটা হারিয়েছেন। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা ছাড়া স্থায়ী কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার নিজের বাড়িও ভাঙনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে শেষরক্ষা হবে বলে মনে হয় না। মোল্লারহাট থেকে খুদিরকুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়গামী প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো গ্রামীণ সড়কটির ৬০ থেকে ৭০ ফুট অংশ নদীতে চলে গেছে। এখনই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে সড়কটি থাকবে বলে মনে হয় না।’

মিজান আরও বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র যেন রাক্ষস হয়ে গেছে। হঠাৎ পানি আর স্রোত বাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে কোনোভাবে ভাঙন থামছে না। আমাদের গ্রামটি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দরকার। বালুর বস্তা ফেলে শেষরক্ষা হবে না।’

ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী এবং অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো। ধরলার উজান থেকে বেগমগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার ভাঙনকবলিত তীরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। আর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র তীর প্রতিরক্ষায় ‘সুখবর’ থাকলেও এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে চলমান ভাঙন থেকে আপাতত নিস্তার মিলছে কিনা তা নদের গতিবিধির ওপরই নির্ভর করছে।

পাউবো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ধরলা তীরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্লক, স্যান্ড সিমেন্ট এবং স্যান্ড ব্যাগ দিয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। এতে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ধরলা তীরবর্তী অংশের স্থায়ী প্রতিরক্ষা হবে। তবে ইউনিয়নের অপর প্রান্তে ব্রহ্মপুত্র তীর প্রতিরক্ষায় সামান্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে স্যান্ড সিমেন্ট ব্যাগ ব্যবহার করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য আমরা ডিজাইন প্রস্তুত করছি।’

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
নদীভাঙন রোধে অবৈধ ড্রেজার মালিকদের আইনের আওতায় আনা হবে: ফাওজুল কবির খান
জোয়ারের পানিতে নিঝুম দ্বীপের সড়কে একাধিক ভাঙন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
শঙ্খ নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি, জনমনে আতঙ্ক
সর্বশেষ খবর
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের