বিএনপির ডাকা নবম দফা অবরোধ কর্মসূচির বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফোরকান আলী (৪০) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার সাজাপুর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
ফোরকান আলী শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি উপজেলার ঘাষিরা সুফিপাড়ার মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। সাজাপুর এলাকায় টিএমএসএস বোর্ড মিলের মেশিনম্যান ছিলেন ফোরকান।
এদিকে, পুলিশের হামলায় ফোরকান মারা গেছেন দাবি করে স্থানীয় বিএনপি ও অংগঠনের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, পুলিশের হামলায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ফটকি ব্রিজ এলাকায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ফোরকান কর্মস্থল থেকে মিছিলে অংশ নেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি এলে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। ফোরকান মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করেন- পুলিশের হামলায় আহত ফোরকান মারা গেছেন।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, পুলিশের হামলায় মিছিলে থাকা খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ফোরকান আলী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিহিত পুলিশের এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা ফোরকান আলীর রক্তের শপথ করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
এ ব্যাপারে শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক শাহীন বলেন, ‘অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে র্যাব ও পুলিশের হামলায় আহত যুবদল নেতা ফোরকানের মৃত্যু হয়েছে।’
তবে খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফোরকান হৃদরোগে মারা গেছেন। তার মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তার ওপর পুলিশের হামলার ঘটনা ঘটেনি।’
একই কথা বলেছেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফোরকানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। মিছিলে গিয়ে তিনি হৃদরোগে মারা গেছেন।’
ফোরকানের বাবা মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ফোরকান আগে থেকেই হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুলছিল। মিছিলে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জেনেছি।’
শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সাজাপুর এলাকায় কোনও পুলিশ ছিল না। হামলার প্রশ্নই আসে না।’ পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফোরকানের শ্বাসকষ্ট ছিল। মিছিল এসে স্লোগান দেওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’