শাজাহানপুরে জোড়া খুনে ঘটনায় মামলা হয়নি ৩ দিনেও, পাল্টা হামলার শঙ্কা

বগুড়ার শাজাহানপুরের সাবরুলে স্বেচ্ছাসেবকলীগকর্মী সাগর তালুকদার ও তার সহযোগী স্বপন আলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন দিনেও মামলা হয়নি। পুলিশ হত্যার কারণ আধিপত্য বিস্তার ও বিরোধের জের বলে দাবি করলেও ঘাতকদের শনাক্ত করতে পারেনি। এ ছাড়া তার অপর সঙ্গী কবজি হারানো মুক্তার হোসেনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় এলাকার পরিস্থিতি থমথমে ও পাল্টা হামলার ভয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়েছেন।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে শাজাহানপুর থানার নবাগত ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, জোড়া হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত সাগর তালুকদার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল হাটখোলাপাড়ার মাদক কারবারি গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। তার সঙ্গী স্বপন আলী একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে ও আহত অবস্থায় পলাতক মুক্তার হোসেন প্রতিবেশী আনসার আলীর ছেলে। সাগর একসময় বাসের হেলপারি করতেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার হাত ধরে রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৫/২০ জন সদস্য নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। যা সাগর বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে মাদক ব্যবসা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় তিনটি হত্যাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জেলে বসে শাহজালাল তালুকদার পারভেজ নামে শিক্ষককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সাগর ও তার বাহিনীর সদস্যরা বগুড়ার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ৩০ গ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে ওঠেন।

অভিযোগ আছে, সাবরুল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মামা-ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজ তার সন্ত্রাসের আখড়া ছিল। তিনি সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পান। এলাকায় ফিরে আগের মতো তার অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যান। সাবরুলের হরিদেবপুর নামে এক বড় জলাশয় দখল নিয়ে সাগর, স্বপন ও মুক্তার মাছ চাষ করেন। সাগরের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার মাদক ব্যবসায়ী। বাবার কাছেই সাগরের মাদক ব্যবসার হাতেখড়ি। রাজনৈতিক ও পরিবারের প্রশ্রয় পেয়েই সাগর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাগর, স্বপন ও মুক্তারপুকুর থেকে সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামে আসেন। এ সময় সেখানে ১৫/২০ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিকে কুপিয়ে সাগর ও স্বপনকে হত্যা করা হয়। এ  সময় মুক্তারের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তিনি আত্মগোপন করেন।

হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে সাগরের লোকজন আবদুল গফুর নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাঙচুর করে। সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার লোকজনের হামলার ভয়ে অনেকে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। সাবরুল মন্ডলপাড়া ও সাবরুল বাজারের পরিস্থিতি থমথমে।

এদিকে, জোড়া খুনের বিষয়ে গ্রামবাসীরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকদের ধারণা, সাগর বাহিনীর নির্যাতনের শিকার প্রতিপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা দাবি করেন, সাগর ও স্বপনের মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।

বুধবার বিকালে শাজাহানপুর থানার নবাগত ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, গত তিন দিনে জোড়া খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। মামলার প্রস্তুতি চলছে। সাগরের বোন রোকসানা মামলা করতে পারেন। নিখোঁজ মুক্তারের সন্ধান মেলেনি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।