বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনা এবং বাঙালি নদীতে গত কয়েকদিন ধরেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পানি বিপদসীমার ২৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি বৃদ্ধির কারণে যমুনায় জেগে ওঠা ডুবোচরগুলো আবারও ডুবতে শুরু করেছে। পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে সদ্য রোপণ করা স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান গাছ। হুমকিতে রয়েছে আগাম রোপণ করা মরিচ, মাষকলাই এবং মিষ্টিকুমড়াসহ শীতকালীন শাকসবজি।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা এবং বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা নদীতে পানির বিপদসীমা ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই দিন ৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে পানির উচ্চতা হয় ১২ দশমিক ৪১ মিটার। তার পরদিন ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে উচ্চতা হয় ১২ দশমিক ৭৮ মিটার। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি সর্বোচ্চ ৬১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায় এবং পানির উচ্চতা হয় ১৩ দশমিক ৩৯ মিটার। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) যমুনা নদীতে পানি ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
আর এদিকে গত কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনার সঙ্গে বাঙালি নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৭৭ মিটার। মঙ্গলবার সকালে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ২৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর যমুনা এবং বাঙালি নদীর অববাহিকায় জমা পলিমাটিতে গত কয়েকদিন আগে থেকেই কৃষকরা স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান রোপণ শুরু করেছেন। জো (কাঙ্ক্ষিত পানি আসা) আসা জমিতে মরিচ, মিষ্টিকুমড়া, মাষকলাইসহ বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতের শাকসবজির চাষ করেছিলেন। এদিকে, অসময়ে পানি বৃদ্ধির ফলে কয়েকদিন ধরে রোপণ করা স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান পানিতে নিমজ্জিত হওয়া শুরু করেছে। নিচু জমির মরিচ গাছ, মাষকলাই এবং শাকসবজির জমি পানিতে ডুবতে শুরু করেছে। এ ছাড়া গত কয়েকদিন আগে যমুনায় জেগে ওঠা বিভিন্ন ডুবোচরগুলো আবারও পানিতে নিমজ্জিত হওয়া শুরু করেছে। উপজেলার চালুয়াবাড়ী, সদরের আংশিক, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল এবং হাটশেরপুর ইউনিয়নের আংশিক নিচু জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল খেয়াঘাটের মাঝি সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি কমে চর জেগে গত কয়েকদিন আগে তার নৌঘাটের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছিল। তিনি দেড় কিলোমিটারের পথ অন্য পথে সাত কিলোমিটারে পাড়ি দেওয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত দুদিনে পানি বাড়ায় তার আগের নৌরুটই আবারও চালু হয়েছে।
একই ইউনিয়নের নিজতিতপরল গ্রামের ফকির মিয়া বলেন, ‘যমুনা নদীর জেগে ওঠা চরের পলি মাটিতে গত কয়েকদিন আগে থেকে গাইঞ্জা ধান রোপণ করা শুরু করেছি। ধান গাছগুলো সবুজ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেশ কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার জমির আশেপাশের বেশ কিছু মরিচ এবং মাষকলাই জমিতেও পানি উঠতে শুরু করেছে।’
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘উজানের ভারী বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির এ ধারা আরও বেশ কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে এ যাত্রায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।’