পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে অবস্থিত দেশের অন্যতম সরকারি মানসিক হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের হয়রানি, প্রতারণা ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে ৯ জন দালালকে আটক করেছে প্রশাসন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে এক মাসের বিনা শ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পাবনা জেলা প্রশাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) যৌথ উদ্যোগে এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
এনএসআই পাবনার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুরাদ হোসেন। অভিযানে পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করেন। অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
আটকরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার কিসমত প্রতাপপুর গ্রামের মৃত রফিজ উদ্দিনের ছেলে মুকাররম (৫০), একই এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম (৪২), ইসলামপুর গ্রামের মৃত জামাল শেখের ছেলে হালিম (৪০) ও আব্দুল লতিফ মণ্ডলের ছেলে মানিক মণ্ডল (২৪), হেমায়েতপুর গ্রামের মৃত সামাদ শেখের ছেলে শফিকুল (৫৫), শহিদের ছেলে ছাবিত (১৯), মুনজিরের ছেলে মুন্নাফ (৩১), বুদেরহাট গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে জুয়েল রানা (৩০) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মৃত ইসরাইলের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫)।
জেলা এনএসআইয়ের দুই সদস্য কয়েকদিন ধরে গোপনে হাসপাতালের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা দেখতে পান, দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীদের স্বজনরা অসহায় অবস্থায় হাসপাতালের দালালদের খপ্পরে পড়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই তথ্য তারা উপপরিচালক, এনএসআই পাবনাকে জানান এবং পরবর্তীতে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে দালালদের হাতেনাতে আটক করে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, এসব দালাল দীর্ঘদিন ধরে মানসিক হাসপাতালের আশপাশে অবস্থান করে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো। সিট জোগাড়, চিকিৎসক দেখানো, ওষুধ সংগ্রহ কিংবা ভর্তি প্রক্রিয়ায় তারা নিজেরাই ‘অনেকটা নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। যার ফলে প্রকৃত রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাবনার অন্যান্য হাসপাতালেও দালালবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হেমায়েতপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেছি। সদর এসিল্যান্ড ও এনএসআই দালালদের হাতেনাতে ধরেছে। এরপর তাদের তাৎক্ষণিকভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’