ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে মিল শতভাগ: পুলিশ কমিশনার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার স্থান পরিদর্শনের পর ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের শতভাগ মিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীমহানগর পুলিশের এ কমিশনার বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তার ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়েছে। ঘাড়ে বড় বড় তিনটি কোপ রয়েছে। ঘটনাস্থলেই মার্ডার হয়েছে। এসব ক্লু দেখে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে রাখতেই হচ্ছে। তবে তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন,‘রেজাউল করিম লেখালেখি করতেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে কোথায় লেখেন বা কোন নামে লেখেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়টি মাথায় রেখে সেদিক ধরে তদন্ত করবে পুলিশ।’ 
তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়ি দরগামারিয়ায় একটি গানের স্কুল তিনি করেছেন। কিন্তু সেখানে গান-বাজনা হোক তা আশপাশের মানুষ চায় না। এ নিয়ে স্থানীয়দের অনেকের সঙ্গে উত্তপ্ত কথাবার্তা হয় বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের এ কমিশনার আরও বলেন, অধ্যাপক রেজাউলের ব্যক্তিগত কোনও শত্রু ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়নি এখনও। কেউ কোনো সময় তাকে হুমকি বা ভয়-ভীতি দেখিয়েছে কিনা জানা যায়নি। তার স্ত্রী, সন্তানরা কেউ এমন কোনও কথা কখনও শোনেননি বা জানেনও না। তাই ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না তেমন। এরপরও বিষয়টি সামনে রাখা হয়েছে।

রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্ষবরণসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। তার ব্যক্তিগত কোনো শত্রু ছিলো না। তবে কয়েক মাস আগে তার কাছে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘একজন শিক্ষক শুধু তার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, রাষ্ট্রের সম্পদ। এভাবে একের পর এক শিক্ষককে হত্যার ঘটনা আমাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীঅধ্যাপক রেজাউলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আগামী তিনদিন বিভাগের সকল ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া রবিবার সকাল ১০টায় বিভাগের সামনে  মানববন্ধন পালন করা হবে।’

সকল বিভাগকে ক্লাস বন্ধ করতে আহ্বান জানান এই অধ্যাপক।

রেজাউল করিম হত্যার ঘটনা শোকের ছায়া বিরাজ করছে ইংরেজি বিভাগে। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগের সামনে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকে কান্নায় ফেটে পড়ছেন।

বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন আলী বলেন, ‘রেজাউল স্যার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি নিয়মিত ক্লাস নিতেন। শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল। তার মৃত্যুতে আমরা আমাদের এক অভিভাবককে হারালাম।’

বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তমাশ্রী দাস বলেন, ‘এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব ছিল বলে কখনও শুনিনি। তাকে কে বা কারা এমন ভাবে হত্যা করলো তা বুঝতে পারছি না। কিন্তু পরিকল্পিত ভাবেই স্যারের মত একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লাশের সুরতহাল ও ময়নাদন্ত শেষে পরিবারে কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। হতাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।

/এইচকে/