রবিবারও সাঁওতালরা পেলেন ১৪৪ বস্তা ধান

Gaibandha PHOTO-05গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে সাঁওতালদের রোপন করা ধান কেটে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও চিনিকলের প্রায় একশত শ্রমিক-কর্মচারী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ ধান কাটেন। এসময় তাদের ১৪৪ বস্তা বুঝিয়ে দিয়েছে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ।




এর আগে বৃহস্পতিবার ২৬ বস্তা, শুক্রবার ৫৬ বস্তা ও শনিবার ৬৭ বস্তা ধান সাঁওতালদের বুঝিয়ে দেয় মিল কতৃপক্ষ। এপর্যন্ত ২ মণ বস্তার ওজনের মোট ২৯৩ বস্তা ধান সাঁওতালদের দেওয়া হল।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল আওয়াল জানান, মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করার পর বস্তাজাত করে সাঁওতালদের দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রায় আড়াই একর, শুক্রবার ৯ একর, শনিবার প্রায় ১০একর এবং রবিবার প্রায় ১২ একর জমির ধান কাটা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রবিবারও আনছেন হেমভ্রমের নেতৃত্বে একদল সাঁওতাল প্রতিনিধির কাছে এই ধান বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
উল্লেখ্য, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষকে ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলেরর চাষ করা হয়। ফলে চিনিকলের বিরুদ্ধে অধিগ্রহনের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে দুই বছর আগে সাঁওতালরা তাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ১ জুলাই সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে বসতি স্থাপন করে। ওই খামারের একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন। বাকী জমিতে ছিল মিলের ইক্ষু ক্ষেত।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের ওই খামারের জমিতে আখ কাটাতে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। তখন ধান ছাড়া সব ফসল লুট হয়ে যায়। এসময় ৯ পুলিশ তীরবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হন চারজন সাঁওতাল। নিহত হয় তিনজন সাঁওতাল। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।

পরবর্তীতে এক রিট আবেদন শুনানি শেষে ১১ নভেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই জমিতে সাঁওতালদের চাষের ধান তাদের কাটতে দিতে অথবা চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ধান কেটে সাঁওতালদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এরফলে সাঁওতালরা নিজেরাই ওই জমির ধান কাটতে চেয়েছিল। এজন্য তারা ইক্ষু খামার এলাকা জুড়ে বসানো কাটা তারের বেড়া তুলে ফেলতে এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছিল প্রশাসনের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ওই ধান কাটতে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করায় বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ধান কাটা নিয়ে প্রথমদিকে সাঁওতালদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা ওই ধান মিল কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে গ্রহণ করেন।
/এমডিপি/