টাকা লুটপাটেই সড়ক মেরামতের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে!





গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক মেরামত কাজগাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক মেরামত কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলার হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভরতখালী এলাকার ব্যবসায়ী ছালাম মিয়া বলেন, ‘তদারকি না থাকায় সড়কের কাজে নিম্নমানের ইট, বালু ও পাথর ব্যবহার করছেন ঠিকাদাররা। ফলে এর সুফল এলাকাবাসী বেশি দিন পাবেন না। মূলত সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট করার জন্যই এই সড়ক মেরামতের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।’







গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, গাইবান্ধা-বাদিয়াখালী-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা বাজার পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে হাতে নেওয়া হয়। দুইটি প্যাকেজে এ কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৪৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
গাইবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে ১৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ পেয়েছে আইসিসি লিমিটেড অ্যান্ড প্যারাডাইস ট্রের্ডাস (জেভি) এবং বাকি ২১ কিলোমিটার রাস্তার কাজ পেয়েছে এমবি মতলুবর রহমান (জেভি)।
গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক মেরামত কাজনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনগড়াভাবে কাজ করছে। ফলে এই এক্সটেনশনবেড দ্রুত দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বাদিয়াখালী এলাকার কলেজশিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেনতেনভাবে কাজ করার কারণে সড়কটি অল্পদিনের মধ্যে আবারও মরণফাঁদে পরিণত হবে।’
ফুলবাড়ী গ্রামের প্রতিফলন সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম খন্দকার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এখানে কাজের সময় ঠিকাদারের ম্যানেজারের কাছে এস্টিমেট দেখতে চাই। কিন্তু তিনি এস্টিমেট না দেখিয়ে যেনতেনভাবে কাজ করেন। এতে বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন চাঁদাবাজির মামলাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিসি লিমিটেড অ্যান্ড প্যারাডাইস ট্রেডার্সের (জেভি) মালিক তাজুল ইসলাম খন্দকার মুঠোফোনে বলেন, ‘কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। কোনও অনিয়ম হচ্ছে না।’
গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক মেরামত কাজসরেজমিনে দেখা গেছে, বাদিয়াখালী থেকে শহরের ভিএইড মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়া হচ্ছে। এরপর সেই মাটি ও এজিনে থাকা (ড্যাম) পুরাতন ইট ট্রাকে করে রিফাইতপুর এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে একপাশে মাটি ও বালু মিশ্রিত করা হচ্ছে। আরেক পাশে শ্রমিকরা পুরাতন ইটগুলো ভেঙে টুকরো করছে। সেখান থেকে ট্রাকে করে সেই মিশ্রিত মাটি, বালু ও ইটের খোয়া ফেলে যেনতেনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে এক্সটেনশন বেড।
নিয়মানুযায়ী, এক্সটেনশনবেডে দুই লেয়ারে বালু ফিলিং (সেন্ট ফিলিং) হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার এক লেয়ারে বালু ফিলিং করছে। এছাড়া ইটের খোয়া শতকরা ৭০ ভাগ ও বালু শতকরা ৩০ ভাগ দিয়ে কমফেকশন করার কথা। কিন্তু সেখানে শতকরা ৩০ ভাগ ইটের খোয়া ও শতকরা ৭০ ভাগ মিশ্রিত মাটি ও বালু ফেলে কমফেকশন ছাড়াই এক্সটেনশনবেড নির্মাণ করা হচ্ছে।
এদিকে, বাদিয়াখালী থেকে সাঘাটা বাজার পর্যন্ত সড়ক প্রস্তুতকরণ কাজেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এমবি মতলুবর রহমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরমালিক মো. মতলুবর রহমান বলেন, ‘কাজে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। সিডিউল অনুযায়ী কাজ চলছে।’
গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক মেরামত কাজতদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আজহার আলী বলেন, ‘আমি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাইটে থাকি। দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে কাজ ভাল হচ্ছে। তবে একটু-আধটু তো অনিয়ম হবেই।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশাদুজ্জামান বলেন, ওই সাইটে একজন উপসহকারী প্রকৌশলী কাজ তদারকির দায়িত্বে আছেন। ফলে এত বড় অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এনআই/বিএল/