উজানের ঢল ও থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানির কারণে এরইমধ্যে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব একটা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চার উপজেলার ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাও রয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি, সদরে ১৯টি, ফুলছড়িতে ৬৫টি এবং সাঘাটা উপজেলায় ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিকের ১২টির মধ্যে সদরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে চারটি, ফুলছড়ি উপজেলায় চারটি মাধ্যমি ও দুইটি মাদ্রাসা, সুন্দরগঞ্জে দুটি মাধ্যমিক ও সাঘাটায় দুটি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘বন্যার কারণে চরঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে পানি উঠেছে। পানির কারণে এরইমধ্যে ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও এর মধ্যে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হেমায়েত আলী শাহ বলেন, ‘বন্যার কারণে এ উপজেলার ৬৫টি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকেছে। পাঠদানের পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয়ে বন্যা পরবর্তী সময়ে পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। বন্ধের দিনগুলোতে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পানি উঠায় বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পাঠদান বন্ধ থাকায় ও শিক্ষার্থীরা বাড়িতেও লেখপড়া করতে না পারায় তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তবে পরবর্তীতে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
কাইয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি ও মাসুম বলেন, ‘বন্যার কারণে বিদ্যালয়ে হাটুপানি তাই বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ। গত সাত দিন ধরে আমরা স্কুলে যেতে পারছি না। বাড়িতে পানি উঠায় ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছিনা।’
অপর শিক্ষার্থী নুরিনা খাতুন বলেন, ‘বন্যার কারণে স্কুলেও পানি, বাড়িতেও পানি। এরমধ্যে কোনভাবে পড়াশুনা করতে পারছি না। সামনে পরীক্ষা আছে এভাবে চলতে থাকলে পড়াশুনার খুব ক্ষতি হবে।’
এদিকে, বন্যার কারণে চার উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। তবে বন্যাকবলিত হাজারো মানুষ বসতবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু জায়গায় অবস্থান করলেও সরকারি বা সেরকারিভাবে সহযোগিতা অপ্রতুল। বানভাসী অনেকের কাছে এখনও পৌঁছেনি ত্রাণ সামগ্রী।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) গৌতম চন্দ্র পাল জানান, জেলার বন্যাকবলিত চার উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিতদের চাল, নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ কর হচ্ছে। এছাড়াও পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির কারণে দুর্গত এলাকায় বেশ কিছু মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: লালমনিরহাটে বন্যা: ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা