বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে

 বন্যায় প্লাবিত তিস্তা পাড়ের গ্রাম (ছবি-নীলফামারি প্রতিনিধি)

বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার এক লাখ মানুষ ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে বিড়ম্বনায় আছে। কাজ না থাকায় উপার্জন বন্ধ। দেখা দিয়েছে নিজেদের এবং গবাদী পশুর খাদ্য সঙ্কট। রয়েছে বিশুদ্ধ ও খাবার পানির অভাব। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেখা দিয়েছে নানা রোগবালাই। যে কারণে বানভাসীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারী ডিমলা উজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চারটি গ্রাম নদীতে চলে গেছে। ওই চার গ্রামে অন্তত দশ হাজার মানুষ বাস করে। জমি-জমা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শত শত মানুষ নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। যে কারণে তাদের অন্যের বাড়িতে কাজ করে, রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।

পূর্ব ছাতনাই কলোনি গ্রামের সামসুল হক (৪৫) বলেন, ‘উজানের পানি বাড়লে তিস্তার পানি বেড়ে যায়। নিমিষেই তলিয়ে যায় শত শত গ্রাম। রক্ষা করা যায় না ভিটাবাড়ীসহ ঘর- দোয়ার, গরু ছাগল, হাঁস মুরগী, জমির ফসল ও বীজতলা।

একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহজালাল (৫৫) বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি জেলার ডিমলা ও জলঢাকার দশটি ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষের। এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছেন তাদের কিছু কিছু বাড়ি ঘর। সরকারিভাবে যেটুকু সহযোগিতা করা হচ্ছে, তা দিয়ে দিন চলে না। বন্যা পরবর্তী পুর্ণবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোনও উদ্যোগ।’ এর স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে অনুরোধ করে আসছে বলে জানান।

তিস্তা বেষ্টিত ডিমলার পুর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ১০ হাজার পরিবার কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে উল্লেখ করে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, বানভাসী মানুষের বন্যা পরবর্তী পুর্ণবাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি তৈরি, ফসলি জমির বীজ সরবারহ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) ঋণের কিস্তি সাময়িকভাবে বন্ধসহ আর্থিক সহায়তা একান্ত দরকার।

এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে থাকায় পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত নানা রোগ। শিশুদের দেখা দিয়েছে চুলকানিসহ আমশায় ও ডায়েরিয়া। তবে পরিস্থিতি মোবাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে, জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পাশাপশি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দিচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

নীলফামারীর সিভিল সার্জন রণজিত কুমার বর্মণ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা স্বার্বক্ষণিক কাজ করছেন। তাদের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে ১ লাখ টাকা ও ৮০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলার জন্য ১৮০ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। প্রয়োজন অনুযায়ী যেখানে যতটুকু লাগবে দেওয়া হবে। তাদের পুর্ণবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন: ৪ দিনের রিমান্ডে আশুলিয়ায় আটক চার জঙ্গি