নয় দিন ধরে বাড়িতে পানি, থাকার মতো কোনও উপায় নেই। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী আর মানসিক রোগী সন্তান আবু বকর’কে (২৪) নিয়ে যাত্রাপুর ওয়াপদা বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন হাসেন আলী। কিন্তু মানসিক রোগী আবু বকরকে চোখের আড়াল করাই তার জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন শেকলে। তাই বাঁধের ওপরে শেকলে বাঁধা জীবনেই দিন কাটছে আবু বকরের।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া যাত্রাপুর ইউনিয়নের ধরলার পাড় (গাবের তল) গ্রামের হাসেন আলী (৬৫) জানান তার জীবনের কথা। তিনি জানান, প্রায় আট বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছে আবু বকর। অনেক চিকিৎসার পরও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মাঝে মাঝেই বাবা-মা ও বড় ভাইসহ প্রতিবেশীদেরও মারধোর করতো। একবার বড় ভাই মজনুকে দা দিয়ে কুপিয়েছিল আবু বকর। সুস্থতার কোনও লক্ষণ না দেখে শেষে তার হাত-পা শেকলে বেঁধে রাখা হয়। বিগত চার বছর ধরে শেকলে বাঁধা রয়েছে আবু বকর।
মানসিক রোগী আবু বকরের বাবা-মায়ের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশে দাঁড়িয়ে শেকলে বাঁধা আবু বকর নানা প্রলাপ করছিলো। নিজের নাম, বাবা-মায়ের নামসহ গ্রামের নামও বলছিলো আবু বকর। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেক নারী-পুরুষ ভিড় করছিলো আবু বকরকে ঘিরে।
তবে আবু বকরের মতো দুই হাত-পা শেকলে বাঁধা না থাকলেও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন বাঁধ আর রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া লাখো মানুষ পানির অদৃশ্য শেকলে বন্দি। চাইলেও কোনও দিকে যেতে পারছেন না, ঠিকমত খাবারও পাচ্ছেন না জেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ। পানির শেকলে বাঁধা বাঁধের জীবনে দিন কাটছে তাদের।
/এমও/