রসিক নির্বাচন: প্রার্থীরা মাঠে, ক্লিন ইমেজ চায় দলগুলো

রসিক নির্বাচনডিসেম্বরের সম্ভাব্য নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনি আমেজ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক)। এটি এই সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন এই প্রথম। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখনই পুরোদমে মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক ডজন ও বিএনপির কমপক্ষে পাঁচ জন নেতা রয়েছেন এই তালিকায়। আবার জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করলেও তার প্রার্থিতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছেন আরেক প্রার্থী। এই প্রার্থীরা এখন থেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ, যোগাযোগ রাখছেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দল প্রার্থী ঘোষণা করলে তার পক্ষেই কাজ করবেন তারা। আর দলগুলো বলছে, এই নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় প্রার্থীকেই তারা মনোনয়ন দিতে চায়।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রসিক নির্বাচনে কেবল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে দলের মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তখন থেকেই নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করে দেন মোস্তফা। ভোটকেন্দ্রকে ঘিরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করাসহ সার্বিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে বেশ কিছুদিন আগে এরশাদের ভাতিজা ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ নিজেকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি দাবি করেন, তাকেই শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরও জানান, সাত মাস আগেই প্রকাশ্য জনসভায় মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। তাই তিনিই জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কমপক্ষে এক ডজন নেতা মেয়র পদে দলের মনোনয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এদের সবাই নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-ব্যানার টানিয়ে প্রচার চালালেও ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছেন হাতেগোনা চার-পাঁচ জন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে রয়েছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী খালেকুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও এফবিসিসিআই পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, রংপুর চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলামস মিলন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল ও সেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু। এছাড়া জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন সাবেক পৌর মেয়র মানিক। আর বর্তমান মেয়র শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু বলছেন, দলের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবেন তিনি।

রংপুর সিটি করপোশনের নির্বাচনকে ঘিরে জোর প্রচারণা আর গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়প্রত্যাশীরাও। তাদের প্রত্যেকেই দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। এসব নেতার মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি কাওছার জামান বাবলা, মহানগর বিএনপির সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু, সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান শামু, যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম প্রমুখ।

এর বাইরে ইসলামী আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা বাবু ঘোষণা দিয়েছেন রসিক মেয়র পদে নির্বাচনের। এছাড়াও আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন এই নির্বাচনে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাই কমান্ড এই নির্বাচনে ক্লিন ইমেজ ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদেরই প্রার্থী করতে চায়। দলের একক প্রার্থী হিসেবে যেন তাকে নিয়ে কোনও ধরনের বিতর্ক না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে চান তারা। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা নিয়েও রয়েছে জটিলতা। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ এর আগে বলেছেন, রসিক নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকেই একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব তিনি রেখেছেন আওয়ামী লীগের কাছে। তার এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হবে বলেও আশাবাদী তিনি। যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রংপুরে এরশাদের দুর্গে ফাটল ধরেছে অনেক আগেই। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীই বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’

রসিক নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার এক ডজনেরও বেশি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগের করার কিছুই নেই। আওয়ামী প্রধান যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই মনোনয়ন দেবেন। এখানে তদবির করে লাভ নেই।’

জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি দল। তারপরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।’ দলের চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে দেশে আসার পর যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন- 

রংপুর সিটির ভোট হতে পারে ২৮ ডিসেম্বর


সিটি নির্বাচনে আইভীর মতো জনপ্রিয় প্রার্থী খুঁজছে আ. লীগ