ঠাকুরপাড়ায় হামলা: শিবিরকর্মী দেখিয়ে গুলিবিদ্ধ চার কিশোরকে গ্রেফতার

ঠাকুরপাড়ার তাণ্ডবের সময় গুলিতে আহত কিশোররংপুরে সদর উপজেলার পাগলাপীর ঠাকুরপাড়া গ্রামে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের সময় পুলিশের গুলিতে আহত চার কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এসব কিশোরের পরিবারে দাবি তারা নির্দোষ। তাদের মধ্যে দু’জন স্কুল ও কোচিং থেকে ফেরার পথে এবং দু’জন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাণ্ডব দেখার সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে। তারা সবাই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

ফেসবুকে বিতর্কিত একটি স্ট্যাটাসের অভিযোগ তুলে শুক্রবার ঠাকুরপাড়ায় হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর আশেপাশের ৬-৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে ১০ জন আহত হয়। পরে আহতদের মধ্যে একজন মারা যান। মাহবুব নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আইসিসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকি ৮ জন পুলিশি পাহারায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। ওই ৮ জনকে ২ টি মামলার আসামি দেখিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই আট জনের মধ্যে চারজনই কিশোর।

 সরেজমিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ১৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চার কিশোরের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়।

৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলামের মা আরজিনা বেগম জানান, তার ছেলে প্রাইভেট পড়া শেষ করে বাড়িতে আসছিল এ সময় পুলিশের গুলিতে সে আহত হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর শনিবার পুলিশ এসে জানায় ওকে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি এর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বলেন,‘তার সন্তানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। ওই ঘটনা সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হোক।’

ঠাকুরপাড়ার তাণ্ডবের সময় গুলিতে আহত কিশোর

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমের বাবা জানান, তার ছেলে স্থানীয় সলেয়াসার লালচান্দ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় সে বাসাতেই ছিল। লোকজনের মিছিল দেখে সেও অন্যদের মতো বাসা থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলে হঠাৎ গুলি শুরু হয়। এরপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে তারা জানতে পারে সেও নাকি মামলার আসামি।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিমের বাবা বাদশা মিয়া জানান, তার ছেলে স্থানীয় মুন্সিরহাট স্কুলের ছাত্র। নাজিম ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। সে বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। লোকজনের চিৎকার শুনে সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর পরই পুলিশের গুলিতে আহত হয়।পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন শুনছেন তার ছেলেকেও নাকি মামলার আসামি করা হয়েছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিলের বড় বোন বলেন, তাদের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে, মুন্সিরহাট এলাকায়। ঘটনার দিন কোচিং শেষে তার ভাই অটোরিকশায় করে বাসায় ফিরছিল। এসময় তাণ্ডবের মধ্যে পরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এখন পুলিশ বলছে তাকে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে। সে এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।

ঠাকুরপাড়ার তাণ্ডবের সময় গুলিতে আহত কিশোর

তিনিও পুরো ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তার নিরাপরাধ ভাইকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ।

হাসপাতালে ভর্তি ৮ জনকে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে এসআই মকবুল হোসেনসহ পুলিশের ১০ কনস্টেবল। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য জানান, প্রথম দিন সবার হাতে হাত কড়া লাগানো হয়েছিল। পরে খুলে ফেলা হয়েছে। ওই চার কিশোরকে আমরা দেখাশোনা করছি।তবে তারা শুধু কান্নাকাটি করছে।

এ ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, ঘটনার সময় নিহত হামিদুল জামায়াত কর্মী। আহতরাও ছাত্র শিবির করে। রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারাই আমাদের কাছে মুখ্য তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়।অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই আমরা বিবেচনা করছি। তদন্ত করে যারাই দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন,‘কোনও নিরাপরাধ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়।সেটা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। চার কিশোরকে আটক করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গত ৩ দিনে ১২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার পর পরেই ৫৩ জন রবিবার ৪৭ জন এবং সোমবার ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন: ‘টিটু রায়কে গ্রেফতার করতে পারলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে’