শতবর্ষী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট থেকে সরানো হলো সেই ভিত্তিপ্রস্তর

এম টি ইনস্টিটিউট থেকে সরানো হয়েছে স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তরঅবশেষে লালমনিরহাটের শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে স্কুল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরটি সরানো হয়েছে। এর আগে গত ২ নভেম্বর জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালিত ‘এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্কুল নির্মাণের নামে রেলের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনা তৈরি হয়। অবশেষ শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে ভিত্তিপ্রস্তরটি চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।এম টি ইনস্টিটিউট

রবিবার (১৯ নভেম্বর) লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এ কে এম কামরুল হাসান বকুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত সবকিছু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে রেল মন্ত্রণালয় থেকে এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে ওই জায়গা লিজ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে ভিত্তিপ্রস্তর, ইট ও টিনের চালা সরিয়ে নেওয়া হলেও সেখানে এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেমে নেই। সেখানে স্কুল করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। শতবর্ষী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটকে সংরক্ষণের পাশাপাশি সেটিকে নতুন করে উজ্জীবিতও করতে হবে।’ এম টি ইনস্টিটিউট 

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট চত্বর এলাকায় অন্য কোনও স্থাপনা না করার সিদ্ধান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। তবে শতবর্ষী এই ইনস্টিটিউটকে পুনরায় উজ্জীবিত করার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলের ব্যস্ততম রেলওয়ে জংশন লালমনিরহাটে রেলকর্মীদের বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার জন্য ১৯০৫ সালে গড়ে উঠেছিল এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট মঞ্চ। অবিভক্ত ভারতবর্ষে যে কয়টি ঘূর্ণায়মান মঞ্চ ছিল এটি ছিল তার অন্যতম।এম টি ইনস্টিটিউট

ইতিহাস ঘেঁটে ও লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম ও হিমালয়ের পাদদেশের এলাকাগুলোর সঙ্গে অবিভক্ত বাংলার রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতো লালমনিরহাট রেলওয়ে জংশন। তখন রেলওয়ের জন্য এত ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয় যে এখনও জেলা শহরের এক চতুর্থাংশ জায়গার মালিকই রেলওয়ে। সেসময় এই রেল জংশনে ২২টি রেললাইন স্থাপন ও ৪টি স্টেশন প্ল্যাটফরম নির্মাণ করা হয়। নির্মিত হয় রেলওয়ে ওয়ার্কশপসহ বহু প্রতিষ্ঠান।

এই স্টেশন দিয়ে আসাম রেল ও ব্রিটিশ ডুয়ার্টস রেল (বিডিআর) নামে দুটি ট্রেন চলাচল করতো। এরই সুবাদে এখানে বিপুল সংখ্যক রেলকর্মীর বসবাস ছিল। প্রায় ২২ হাজার রেলওয়ে কর্মীর বসবাসের জন্য শহরে বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লাও গড়ে ওঠে। আর তাদের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দক্ষিণ সাপটানা মৌজা (বাবুপাড়া) এলাকায় ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট। দক্ষিণ সাপটানা মৌজার ৩১০৫ নম্বর দাগে ২ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই মঞ্চটি রেলওয়ে অডিটোরিয়াম নামেও পরিচিত। এক সময় এই ইনস্টিটিউটে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও ছিল।

আরও পড়ুন-

স্কুলের নামে শতবর্ষী ঐতিহ্য এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট দখলের পাঁয়তারা!

শতবর্ষী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট: এখনও সিদ্ধান্তহীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অনড় চেম্বার অব কমার্স