শীতবস্ত্রের অভাবে ও ঝুপড়ি ঘরে দুর্ভোগ সাঁওতাল পল্লীতে

gaibandha-3গত কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের দুই শতাধিক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। এক বছর দুই মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতায় কোনোরকম বেঁচে থাকলেও তীব্র শীতে তাদের কষ্টের মাত্রা বেড়েছে। কর্মহীন এসব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রাম। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সহায়-সম্বল হারিয়ে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দুই শতাধিক পরিবারের মানুষ আশ্রয় নেয় দুই গ্রামে। নিঃস্ব হওয়া এসব মানুষ ছোট ছোট ছাপড়া আর ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।
মাদারপুর-জয়পুরপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলা ও আগুন দিয়ে আমাদের চার শতাধিক বসতঘর পুড়িয়ে দেয় পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। পরে কোনোরকম প্রাণে বেঁচে আশ্রয় নেই মাদারপুর-জয়পুরপাড়ার সাঁওতাল পল্লীতে। আশ্রয় নেওয়ার পর প্রথম দুই-তিন মাস সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি-সংগঠন আমাদেরকে নগদ টাকাসহ চাল-ডাল দিয়ে সহযোগিতা করেন। সেসময় শীত নিবারণের জন্য প্রশাসন ছাড়াও অনেকে আমাদের মধ্যে গরম কাপড় বিতরণ করেছিলেন। এরপর থেকে ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা ও শীতে চরম দুর্ভোগ পোহালেও আমাদের কেউ খোঁজ রাখেনি।’
শীতের এই তীব্রতায় নারী-পুরুষের পাশপাশি বেশি কষ্টে আছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এরই মধ্যে প্রশাসন ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু কম্বল পেলেও তা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম।
মাদারপুর গির্জার সামনে বসবাস করা রমেশ টুডু বলেন, ‘উচ্ছেদের পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালরা খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তীব্র এই শীতে একেবারে কাহিল অবস্থা বিরাজ করছে এখানকার মানুষের মধ্যে। কাজকর্ম করতে না পারায় গরম কাপড় কিনতে পারছেন না তারা। ফলে স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে চুলার আগুনে কোনোরকম শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।’gaibandha-1
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সংগঠন আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি বার্নাবাস টুডু বলেন, ‘শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাঁওতালরা। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ঝুপড়ি ঘর আর ছাপড়া ঘরে বসবাস করে সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন তারা। তবে বেশি কষ্টে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকে সর্দি-জ্বর সহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’ শীতের কবল থেকে রক্ষায় এসব মানুষকে গরম কাপড় দিয়ে সহযোগিতার জন্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
টাটি টুডু নামে অপর এক সাঁওতাল বলেন, ‘স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন গত এক মাস আগে কিছু চাল দিয়েছেন। এছাড়া এবারের চলমান শৈত্যপ্রবাহে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা কম্বল ছিল একেবারে কম।’
পলুস মাস্টার বলেন, এই শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় এখানে বসবাসকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তিনি গরম কাপড় বিতরণের জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জহিরুল হক বলেন, ‘এ উপজেলার জন্য বরাদ্দ পাওয়া ১০ হাজার ২৫০টি কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাঁওতাল পল্লীতে বসবাস করা মানুষের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সোমবার বিকালে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ৬০০ জনকে কম্বল ও মাফলার দেওয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ পাল বলেন, ‘জেলার ৮২ ইউনিয়নে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব কম্বল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আরও ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে আবেদন করেছি। এসব কম্বল হাতে পেলে আবারও বিতরণ করা হবে।’