‘মানুষ আর হামাক বোকা বানেবার পাইবে না’

লেখা শেখানো হচ্ছে‘হামরা পড়িবার পাইছোনো (পারি না) না দেখি, মানুষজন যেঠে-সেঠে (যেখানে-সেখানে) হামার টিপসই নিয়া বোকা বানাইছিল। এলা হামরা এখন পড়িবার পাই। মানুষ আর হামাক বোকা বানেবার পাইবে না।’ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাজরা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা বলেন। তিনি নিরক্ষর ছিলেন। তাকে লেখতে-পড়তে শিখিয়েছে সেতুবন্ধন পাঠশালা।

এলাকার নিরক্ষর বয়স্কদের জন্য পাঠশালাটি খুলেছে  সৈয়দপুরের উপজেলার সেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধন। খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেল পুকুর গ্রামের নির্মাণাধীন একটি বাড়ির উঠানে চলে এই পাঠদান। সেখানে ব্যানারে লেখা রয়েছে—শিক্ষা নেবো শিক্ষিত হবো, নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়বো।

পাঠদান চলছেপ্রতি শুক্রবার ওই এলাকায় অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্করা সেতুবন্ধনের আয়োজনে একত্রিত হয়। উদ্দেশ্য—নিজের নাম ঠিকানা (প্রাথমিক শিক্ষা) ও স্বাক্ষর জ্ঞান অর্জন করা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার আসিদা বেগম, রেজিয়া খাতুন ও শাহের বানুও একেবারে লেখতে-পড়তে পারতেন না। এখন তারাও লেখতে-পড়তে পারেন। আগে টিপসই দিতেন এখন কাগজ-কলমে স্বাক্ষর দিতে শিখেছেন।

পাঠদান চলছেওই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগোত হামরা দোকানত বাকি খাছিনো। দোকানদার দাম কছিলো একখান আর খাতাত লেখিছিলো আরেকখান। হামাক সহজে ঠকেবার পাছিলো। এলা হামরা লেখিবার পাই। এখন হামাক আর কাহো (কেউ) ঠকেবার পাবে না।’

পাঠদান চলছেসেতুবন্ধন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিরক্ষর মুক্ত গ্রাম গড়ার প্রত্যাশায় আমাদের এ পাঠশালা। গ্রামের নিরক্ষর মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আমাদের এই পাঠদান ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাখি ও প্রকৃতি সুরক্ষায় কাজ করার পাশাপাশি আমরা আরও কিছু সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজে অবদান রাখতে চাই। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে সেতুবন্ধন পাঠশালা। সামনে সেতুবন্ধন পাঠাগার নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।’

লেখা শেখানো হচ্ছেসৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘সেতুবন্ধনের কার্যকলাপ গোটা উপজেলায় বেশ প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসন সংগঠনটির সেবামূলক কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।’