তারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) মাঠে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর গোটা সৈয়দপুরে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় অবাঙালিদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাঙালিরা। ওই সময়কার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডা. জিকরুল হকের নেতৃত্বে সৈয়দপুরের সমস্ত বাঙালি এক কাতারে শামিল হয়। সেদিনই সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনায় অবাঙালিরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গোটা শহরে তাণ্ডব চালায়। নারী নির্যাতনসহ নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা।
তাদের স্মৃতি রক্ষার জন্য সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও শহরের ডাকবাংলো মোড়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও আজও তা শেষ হয়নি। স্থানীয়রা জানায়, সৈয়দপুরে অবাঙালিরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের এখনও প্রভাব রয়েছে। এ কারণে সেখানকার বধ্যভূমি বা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।
জেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ হয়েছেন ৭১ জন। বর্তমানে জেলায় ৮৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। আরও ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ১৩০ জন মারা গেছেন। অসুস্থ ও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১১৬ জন।
এ জেলায় চিহ্নিত গণকবর (ব্দ্ধভূমি) রয়েছে ২৫টি। এরমধ্যে গোলাহাট বদ্ধভূমি আজও অবহেলা, অযত্নে পড়ে আছে। পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে। যে কয়েকটি বদ্ধভূমি সংস্কার করা হয়েছে তাও আবার অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বধ্যভূমির স্মৃতি ও শহীদদের তালিকা ৪৬ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি যথাযথভাবে।
বদ্ধভূমিগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণে বাঙালিদের পিঠে চাবুক মেরে কাজ করানো হতো। তাদের অনেকে এখনও জীবিত। তাদের রক্ত-ঘামে নির্মিত বিমানবন্দরটির নাম হতে পারতো ‘মুক্তিযুদ্ধ বিমানবন্দর’।