পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার নগর চেংঠীহাজরাডাঙ্গা এলাকার কাউয়াপুকুর গ্রামে মেটাল অ্যাগ্রো লিমিটেড ৪০ একর জমিতে দেশি ফুলের পাশাপাশি প্রায় ১২০ প্রজাতির বিদেশি ফুল চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে জাপানের টাকি সিড থেকে বীজ এনে ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ডাইয়েনতাস, এস্টার, মেথিউলা, এন্টিরিনাম, কেবেজকাট ফ্লাওয়ার, স্যালভিয়া, ভিইওলাসহ ১২০ প্রজাতির বিদেশি ফুল চাষ করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নার্সারি মালিক ও ফুল চাষিরা জানান, বিদেশি ফুল চাষ ও সংরক্ষণে আধুনিক পদ্ধতি এবং কৌশলগত প্রকৃত জ্ঞানের অভাব, সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে পরিবহণ সমস্যা, বিক্রয় কেন্দ্র ও হাট বাজারের সমস্যা, কোল্ডস্টোরেজের অভাব, ফুল চাষে সারের পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব, পাইকারি বাজার না থাকা, মানসম্মত ও উন্নত জাতের বিদেশি ফুলের অপর্যাপ্ত আমদানি বিদেশি ফুল চাষের নানান প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে মেটাল অ্যাগ্রো লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সহযোগিতা পেলে তারা ব্যাপকভাবে বিদেশি ফুল চাষাবাদে এগিয়ে আসবে।
মেটাল অ্যাগ্রো লিমিটেডের কনসালটেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফুল বিশেষজ্ঞ হেইদি ওয়েরনেট বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুলের সম্ভাবনাময় একটি বাজার রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ফুলের বেশি একটা জাত নেই। বর্তমানে যশোর, চট্টগ্রাম ও সাভারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ করা হচ্ছে, যা যথেষ্ট নয়। বাজারে গেলে আমরা গোলাপ, জবা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ মাত্র কয়েক জাতের ফুল দেখতে পাই। অথচ বিশ্ব বাজারে অনেক ফুল আছে। কৃষকরা ফুল চাষ করলে বিদেশি ক্রেতারা এখানে এসে ফুল কিনবেন। দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চল ফুল চাষের উপযোগী জায়গা। আশা করি অল্প সময়েই বাংলাদেশে ফুলের বাজার সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হবে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিদেশি ফুল।’
মেটাল অ্যাগ্রো লিমিটেডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হুসাইন বলেন,‘নন্দিনী, সিলভিয়াসহ বিশ্বে অনেক ধরনের ফুল আছে। আমরা এসব ফুল বাংলাদেশে আনতে চাই। ইতোমধ্যে জাপান থেকে অনেক ফুলের বীজ এনেছি। এখানে প্রায় ১২০ প্রজাতির ফুল প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই ফুলের চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চল ফুল চাষের উপযোগী জায়গা। এ অঞ্চলটি ফুল চাষের উপযোগী স্থান। এজন্য আমরা নার্সারি মালিক ও কৃষকদের আমাদের খামারে নিয়ে আসছি। কৃষকরা ফুল চাষ করলে বিদেশি ক্রেতারা এখানে এসে ফুল কিনবেন। ২০১৮ সালের আগামী জুলাই-আগস্ট থেকে পঞ্চগড়, রংপুর, বগুড়া, ঝিনাইদহ, বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সিলেট বাংলাদেশের এই ১০টি স্থান থেকে বীজ ও চারা সরবরাহ করা হবে এবং ফুল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা হবে।’
মেটাল সিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত শাকসবজি ও ধান বীজের পর আমরা ফুল বীজের ব্যবসা করে থাকি। বাংলাদেশে ফুলের বিশাল মার্কেট রয়েছে। বাংলাদেশ চায়না ও মালয়েশিয়া থেকে ফুল আমদানি করে থাকে। এখন আমাদের দেশে শুধুমাত্র শীতকালে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে অনেক সময় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি গ্রীষ্মকালেও যেন ফুল চাষ করা যায়। তাহলে কৃষকরা সারাবছর ফুলের আবাদ করে অনেক লাভবান হতে পারবে।’