নিহতরা হলেন- মীরগঞ্জ ইউনিয়নের শংকর চন্দ্র রায় (১৭), প্রশান্ত রায় দিপু (১৬),তরুণ চন্দ্র রায় (১৬), রঞ্জিত কুমার (৩০), অমিত চন্দ্র (১৯), বিপ্লব চন্দ্র (১৫), সেলিম (১৫), মাছুম (১৬), মোরসালিন (১৫) শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কনক (৪০), বিকাশ (৩২), মনোরঞ্জন (১৭) ও মৃণাল (১৫)। এরা অধিকাংশই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই ১৩ পরিবারের বাড়িতে চলছে কান্না-আর্তনাদ। তাদের এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মীরগঞ্জ ইউনিয়নের নিজপাড়া ও কুড়ারপার গেলে দেখা যায়, নিহত শংকরের মা জনতা বালা (৪৫) ও নিহত প্রশান্ত রায় দিপুর মা গীতা রানী (৪৭) সন্তান হারিয়ে বিলাপ করে কাঁদছে। আর বলছেন, 'বুকের মানিকেরা কবে বাড়ি আসবে। ওরা যাওয়ার সময় বলেছিল টাকা রোজগার করে লেখাপড়ার খরচ চালাবে। এতে সংসারের কিছুটা হলেও অভাব দূর করবে।'
ওই সময় কথা হয় কুমিল্লা থেকে বাড়িতে আসা তাদের সহকর্মী অনুকুল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। গত বুধবার আমি বাড়িতে আসি। আসার সময় তারা বলেছিল, আমরা কয়েকদিন পর বাড়ি যাবো। বাড়িতে আসার সময় তারা পরিবারের জন্য অনেকেই অনেক কিছু আনতে চেয়েছিল।'
ওই এলাকার নিহত অমিত চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার মা সাবিত্রী রানী (৩২) সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ। বাবা কামিক্ষ্যা চন্দ্র বুকের ধনকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পরেছেন। ভাই নারায়ণ চন্দ্র (২৮) বলেন, দুই মাস আগে সহপাঠীদের সঙ্গে রোজগারের আশায় কুমিল্লায় গিয়েছিল। কিন্তু আজ কী হলো, ভাইকে হারিয়েছি, বিশ্বাস করতে পারছি না।
একই গ্রামের নিহত রঞ্জিতের স্ত্রী সচি রানী (৩১) তার একমাত্র ১০ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান সাথী রানীকে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন আর বলছেন, 'এখন আমার সন্তানের ভবিষ্যত কী হবে।'
এদিকে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাদেরই সহকর্মী সুজন চন্দ্র। দুর্ঘটনা মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে সুজন বলেন, 'ভোরে যখন কয়লাবাহী ট্রাকটি ভাটায় ঢোকে সে মুহূর্তে একটি ইট আমার গায়ে পড়লে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি দাঁড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটি উল্টে ঘরের ওপর পরে। আমিও পড়ে যাই। তখন অন্য সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে।'
উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান হুকুম আলী বলেন, ‘ঘটনা জানার পরই পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে যাই। আমি প্রতিটি পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি মালিকপক্ষের কাছে।’ এদিকে নিহত পরিবারগুলোকে একই ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল হকও।
জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুজাউদৌলা বলেন, ‘এরই মধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও চৌদ্দগ্রাম ইউএনও’র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এখানে আসলে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
নিহত পরিবারগুলোর প্রতি শোক প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য নীলফামারী-৩ মেজর রানা (অব.) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের জন্য আমার ও সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে গিয়ে ইট ভাটার শ্রমিকদের থাকার মেসের ওপর গিয়ে পড়ে। এসময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ১২ জন শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরেক শ্রমিকের।