২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ-হরতাল চলছিল। রাত ১০টার দিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল নাপু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি নৌশকোচ। যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর। কোচটি গাইবান্ধা সদরের তুলসীঘাটের বুড়িরঘর নামক এলাকায় পৌঁছালে পেট্রোলবোমা হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। এতে ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যায় শিশুসহ ৬ জন। পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয় শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নারী-পুরুষ।
এ ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৬০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ঘটনার এক বছর একমাস ১৯ দিন পর বিএনপি-জামায়াতের ৭৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
এদিকে হতাহতের পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন নানা কষ্টে। স্বজন হারানোর বেদনা আজও ভুলতে পারেননি অনেকে। আহত অনেকেই শরীরে ক্ষতের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন। এ ঘটনার পর সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা পেলেও এখন পর্যন্ত আর কেউ তাদের খোঁজও রাখেননি বলে অভিযোগ হতাহতের পরিবারের।
চাঞ্চল্যকর পেট্রোলবোমা হামলা মামলার দ্রুত বিচার কাজ শুরু করে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে সরকার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা হতাহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘চার্জশিট দাখিলের পর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলেও শুরু হয়নি বিচার কাজ। তবে আগামী ৩ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে দিয়ে বিচারকাজ শুরুর কথা রয়েছে।’
এদিকে, মামলার পর তিন বছরে চার্জশিটভুক্ত ৭৭ জনের মধ্যে অধিকাংশই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে তারা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরমধ্যে ঘটনার কয়েকদিন পরেই মামলার প্রধান আসামি শিবিরকর্মী মোস্তফা মঞ্জিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।